জান্তাকে প্রতিরোধের ডাক মিয়ানমারে ক্ষমতাচ্যুত এক নেতার

সেনা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমনপীড়ন ও প্রাণহানি সত্ত্বেও মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এক নেতা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

মাহন উইন খাইং থান নামের ওই নেতা গতকাল শনিবার গোপন স্থান থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বিপ্লবের মাধ্যমে মিয়ানমারের বর্তমান সেনা সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানান।

এদিকে দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহত হওয়া মানুষের সংখ্যা। গতকাল নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে ৮০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হলেন।

গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান করে। তারা সু চিসহ শীর্ষ রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। পরে গণতন্ত্রের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেনা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমনপীড়ন ও প্রাণহানি সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের পর এনএলডির কিছু নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন। তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। এনএলডির যেসব আইনপ্রণেতা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁরা একটি নতুন গ্রুপ গঠন করেছেন। সিআরপিএইচ নামের এই গ্রুপ মাহন উইন খাইং থানকে ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করেছে।

সিআরপিএইচ মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাচ্ছে। তবে দেশটির সেনাবাহিনী সিআরপিএইচকে অবৈধ গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, যে বা যারা সিআরপিএইচকে সহযোগিতা করবে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো জনগণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন মাহন উইন খাইং থান। সেনা অভ্যুত্থানকে মিয়ানমারের জন্য অন্ধকারতম মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেন তিনি। মাহন উইন খাইং থান বলেন, এই অন্ধকার মুহূর্তের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তোলার এখনই সময়।

মাহন উইন খাইং থান বলেন, ‘অতীতে আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও এখন এই সময়ে মঙ্গলের জন্য স্বৈরতন্ত্রের অবসানে আমাদের অবশ্যই পরস্পরের সঙ্গে হাতে হাত মেলাতে হবে।’

সিআরপিএইচের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে তারা একটি ফেডারেল গণতন্ত্র গড়তে চায়। সেই লক্ষ্যে তারা অগ্রসর হচ্ছে।

সিআরপিএইচের নেতা মাহন উইন খাইং থান বলেছেন, সেনা কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন থেকে মিয়ানমারের জনগণ যাতে নিজেদের রক্ষার আইনগত অধিকার পায়, সেই চেষ্টা করছেন তাঁরা। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন করার চেষ্টা করবে সিআরপিএইচ।

জনপ্রশাসন চালাতে একটি অন্তর্বর্তী দল গঠন করা হবে বলেও জানান মাহন উইন খাইং থান।