জান্তাপ্রধানকে বাদ দেওয়ায় হতাশ মিয়ানমার সরকার

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার বলেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিয়ানমারের নেতা মিন অং হ্লাইংকে আসিয়ানের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা খুবই হতাশ। আজ রোববার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত শুক্রবার আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাশাসক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং দেশটির প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের সাড়ে সাত মাস পর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আসিয়ান এই প্রথমবারের মতো কোনো জোরাল পদক্ষেপ নিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে শুক্রবার জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সভাপতির একটি বিবৃতি শনিবার ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিওয়ান ইউসুফ।
সামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিধাবিভক্ত থাকায় ব্রুনেই এক বিবৃতিতে জানায়, মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের পরিবর্তে একজন আমলা জোটের শীর্ষ বৈঠকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গত এপ্রিলে আসিয়ানের বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য একটি রোডম্যাপে সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে অগ্রগতি অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ প্রতিষ্ঠায় জান্তার অঙ্গীকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু আসিয়ান সদস্যদেশ সুপারিশ করেছে যে আসিয়ান মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো ঠিক করতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সুযোগ দেবে।

এদিকে আসিয়ানের বৈঠক থেকে হ্লাইংকে বাদ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা এ নিয়ে খুবই হতাশ এবং তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে যে সিদ্ধান্ত, তা ঐকমত্য ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তা আসিয়ানের উদ্দেশ্যের বিরোধী।

এর আগে মিয়ানমার সেনা সরকারের এক মুখপাত্র এ সিদ্ধান্তের পেছনে বিদেশি হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, মিয়ানমার জান্তাকে সম্মেলনে না রাখার বিষয়টি তারা সমর্থন করে। আসিয়ানের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে এটি কঠিন কিন্তু দরকারি সিদ্ধান্ত।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশেষ দূতকে দ্রুত এবং সম্পূর্ণরূপে পাঁচ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা করতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানাচ্ছে সিঙ্গাপুর।

জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। দেশটিতে বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করে অস্থায়ী গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়েছে। জান্তার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা অতিরঞ্জিত।

গত আগস্ট মাসে মিন অং হ্লাইং নিজেকে দেশটির নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেন। গত ১ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি ২০২৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, তাঁর প্রশাসন মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক দূতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।