জান্তাশাসন অবসানে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বললেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে এবং দেশটির নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। সেই বিক্ষোভ দমনে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানী নেপিডোতে।ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা জান্তাশাসকদের বিদায় করতে ‘যথাসম্ভব সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন তাঁর দেশে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে আবেগঘন এক বক্তব্য দিয়েছেন জাতিসংঘে। এ সময়ই তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ওই আহ্বান জানিয়েছেন।

মিয়ানমার নিয়ে বিশেষ বৈঠকে কিয়াও মোয়ে তুন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি তাঁর দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। রাষ্ট্রগুলোকে তাঁর দেশের সেনাশাসকদের স্বীকৃতি প্রদান বা তাঁদের সহযোগিতা না করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দাবি জানান, গত বছর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি জান্তাশাসকেরা যাতে শ্রদ্ধা দেখায়, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করার।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে তাঁর দেশের শাসকদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া বিরল ঘটনা। মিয়ানমারের প্রতিনিধি সেই কাজই করলেন।

১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের।

জাতিসংঘে বর্মিজ ভাষায় বক্তব্য শেষে তিন আঙুল উঁচিয়ে স্যালুট দেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনে জান্তা সরকারকে বিদায় করার প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে এভাবে তিন আঙুল উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের স্যালুট প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান ঘটাতে, নিরীহ লোকজনের ওপর নির্যাতন বন্ধে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সম্ভাব্য কঠোরতম পদক্ষেপ প্রয়োজন আমাদের।’

মিয়ানমার নিয়ে বিশেষ বৈঠকে কিয়াও মোয়ে তুন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি তাঁর দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। রাষ্ট্রগুলোকে তাঁর দেশের সেনাশাসকদের স্বীকৃতি প্রদান বা তাঁদের সহযোগিতা না করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি গত বছর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি জান্তাশাসকেরা যাতে শ্রদ্ধা দেখায়, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করার দাবি জানান।

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংস আচরণ থামাতে সম্ভব কঠোরতম পদক্ষেপ নিতেও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব; যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত।’

রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যকে বিপুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা।

আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব; যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত।
কিয়াও মোয়ে তুন, জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত

বৈঠকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সাধারণ পরিষদে দেওয়া তাঁর প্রথম বক্তৃতায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে।

আর চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন আবারও তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমারের চলতি ঘটনাপ্রবাহ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।