জাপানজুড়ে হঠাৎ কেন সেনাবাহিনীর মহড়া

জাপানে সশস্ত্র বাহিনীর মহড়ায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ১ লাখ সেনাসদস্য, ২০ হাজার সাঁজোয়া যান ও ১২০টি উড়োজাহাজ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা এখন চরমে। নিত্যনতুন সব হুমকির মুখে এ অঞ্চল। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপান। দেশজুড়ে মহড়া চালাচ্ছে দেশটির স্থলবাহিনী ‘গ্রাউন্ড সেলফ ডিফেন্স ফোর্স’ (জিএসডিএফ)। বিগত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম এ ধরনের কোনো মহড়া চালাচ্ছে তারা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, জাপানে সশস্ত্র বাহিনীর মহড়ায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ১ লাখ সেনাসদস্য, ২০ হাজার সাঁজোয়া যান ও ১২০টি উড়োজাহাজ। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চলা এ মহড়ায় মূলত সেনাবাহিনীর নানা দক্ষতা বাড়ানোর দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জিএসডিএফের মুখপাত্র কর্নেল নোরিকো ইয়োকোতা। তিনি বলেন, আপত্কালীন পরিস্থিতিতে সেনাসদস্যরা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাড়া দিতে পারেন, এ লক্ষ্যে তাঁদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

কয়েক বছর ধরেই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সাবমেরিন থেকে নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপান সাগরে পড়ে। অন্যদিকে জাপানের দক্ষিণে তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা সীমায় দফায় দফায় যুদ্ধবিমানের মহড়া চালাচ্ছে চীন। এসবের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, চীন হামলা চালালে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ মুহূর্তে জাপানকে ঘিরে নিরাপত্তার অবস্থা সবচেয়ে অবনতির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন জিএসডিএফ কর্মকর্তারা। এমন সংকটের মধ্যে জিএসডিএফের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইউচি তোগাশি।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, প্রতিরক্ষামূলক মহড়া চালাতে জাপানের আশিকাওয়া ও হোক্কাইডো থেকে জিএসডিএফের সেনাসদস্যরা দুই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ওইতা প্রিফেকচারের হিজুদাই এলাকায় রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁরা নানা সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেন।

যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল বা দেশের সঙ্গে সংঘাতের আগাম প্রস্তুতি নিতে এসব মহড়া চালানো হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন জিএসডিএফের কর্মকর্তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপগুলোতে যুদ্ধ বাঁধলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, একই ধরনের মহড়া চালানো হচ্ছে হিজুদাই এলাকায়।

জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপগুলোর মধ্যে সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে দেশটির সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব চলমান। দ্বীপটি টোকিওর অধীন থাকলেও এর মালিকানা দাবি করে আসছে বেইজিং। সম্প্রতি জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নোবোউ কিশি বলেন, সেনকাকু যে জাপানের অধীন, সে বিষয়টি প্রশ্নাতীত। আর বহিঃ আক্রমণ হলে এসব এলাকা রক্ষায় মূল ভূখণ্ডের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মিয়াকো, আমামি ওশিমা ও ইয়োনাগুনি দ্বীপে সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এ দ্বীপগুলোর অবস্থান তাইওয়ান থেকে মাত্র ২৩৪ কিলোমিটার দূরে। জিএসডিএফের মুখপাত্র কর্নেল নোরিকো ইয়োকোতা বলেন, যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানেই সেনা মোতায়েন করা জিএসডিএফের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৫৪ সালে জাপানের জিএসডিএফ গঠন করা হয়। তবে সেই সময় থেকেই সত্যিকারের কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি সশস্ত্র এ বাহিনী। আগামী নভেম্বরের মধ্যে বাহিনীর চলমান সামরিক মহড়া শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।