জাপানে এক দিনে করোনা শনাক্তের রেকর্ড

মঙ্গলবার জাপানে প্রথমবারের মতো এক দিনে করোনা সংক্রমণ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাপানেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে জাপানের বড় শহরগুলোতে যেকোনো সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে।

মঙ্গলবার জাপানে প্রথমবারের মতো এক দিনে করোনা সংক্রমণ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর দৈনিক যে হিসাব রাখা হচ্ছে, সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ডেলটা ধরনের প্রভাবে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৯৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল জাপানে।

এরপর করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু অমিক্রন ধরন চলতি বছরের শুরু থেকে জাপানকে ক্রমশ আবারও কাবু করে ফেলছে। রাজধানী টোকিওতে এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পাঁচ মাস পর টোকিওতে দৈনিক সংক্রমণ আবারও ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেল। এর আগে গত বছরের ২১ আগস্ট টোকিওতে ৫ হাজার ২৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যা এখন পর্যন্ত টোকিওতে সর্বোচ্চ শনাক্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অমিক্রনের সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সারা দেশের মতো টোকিওতে আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

মঙ্গলবার সারা দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে সাবধানতা হিসেবে জাপানের বড় কয়েকটি শহরে কার্যত জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে সরকার।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার বুস্টার ডোজ বিতরণে জোর দিচ্ছে জাপান সরকার। এ জন্য করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়ার সময় এগিয়ে এনেছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আগামী মাসের শুরুতে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে।

অমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাপান সরকারের উপদেষ্টা প্যানেলের প্রধান শিগেরু ওমি। শিগেরু ওমি সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন নিশ্চিতভাবে অন্যান্য ধরনের চেয়ে ভিন্ন। এ কারণে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অমিক্রন কতটা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে জাপানের কিছু সংবাদমাধ্যম টোকিওতে সংক্রমণের সাপ্তাহিক গড়ের হিসাব তুলে ধরেছে। সেই হিসাবে করোনাভাইরাসের চলমান ষষ্ঠ ঢেউ শুরু হয়েছে জানুয়ারি মাসের একদম শুরু থেকে। প্রথম সপ্তাহে টোকিওতে সংক্রমণের দৈনিক গড় হিসাব ছিল ৩৩৮ দশমিক ৫। দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক গড় হিসাব বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫০টিতে। অর্থাৎ এই বৃদ্ধির হার পাঁচ গুণের বেশি।

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারি জাপানের সম্রাটকেও বিচলিত করেছে। সম্রাটের প্রাসাদে নববর্ষের শুরুতে জাপানি ঐতিহ্যের কবিতা আবৃত্তির বার্ষিক আয়োজন হচ্ছে সনাতন এক অনুষ্ঠান। সম্রাটের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত কয়েকজন কবি সেখানে নিজেদের রচিত জাপানি রীতির ওয়াকা কবিতা পাঠ করে শোনান।
মঙ্গলবার নির্ধারিত অনুষ্ঠানের জন্য মূল বিষয়বস্তু বা থিম ঠিক করা হয়েছিল ‘মাদো’।

জাপানি ভাষায় এই শব্দের অর্থ হচ্ছে জানালা। এবারের অনুষ্ঠানে সীমিতসংখ্যক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত অতিথিদের সবাই মাস্ক পরে উপস্থিত হন। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেখানে তাঁরা আসন গ্রহণ করেন।

সম্রাটের পরিবারের সদস্য ছাড়াও যুবরাজ ফুমিহিতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সম্রাট স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছেন, যেখানে করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। সম্রাটের পরিবারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা ইমপিরিয়াল হাউসহোল্ড এজেন্সি পরবর্তী সময়ে সম্রাটের রচিত কবিতার যে ইংরেজি অনুবাদ প্রচার করেছে, বাংলা অনুবাদে সেটা ছিল অনেকটা এ রকম—
বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ
জটিল থেকে যাওয়া অবস্থায়
সে রকম এক দিনের প্রত্যাশা আমার একান্ত কাম্য,
জানালা যখন পৃথিবী বরাবর থাকবে খোলা।