জাপানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেল

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মোট সংখ্যা জাপানে গতকাল রোববার দুই হাজারের সীমানা অতিক্রম করে গেছে। সংক্রমণের তৃতীয় একটি ঢেউ সারা দেশে আঘাত হানার মুখে শনাক্ত হওয়া নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকা অবস্থায় কিছুটা ধীরগতিতে হলেও মৃত্যুর হারও এখন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এই হিসাব-নিকাশ নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলছে জাপানের প্রশাসনকে।

জাপানে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। সেই থেকে ৯ মাসের বেশি সময় পর ২২ নভেম্বর এক দিনে তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ১। আজ সোমবার অবশ্য আরও ৭টি মৃত্যুর খবর দিয়েছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে কিছুটা ধীরগতিতে জুলাই মাসের ২০ তারিখে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় মৃত্যুর এই হার সামান্য হলেও জাপানের নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কারণ, দেশটিতে মৃত্যু ঠেকিয়ে রাখায় ব্যর্থতা দেখিয়ে দিচ্ছে যে সংক্রমণ নতুন করেই কেবল ছড়াচ্ছে না, একই সঙ্গে কিছুটা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ তুলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে নাগরিকদের উৎসাহিত করা যুক্তিসংগত হয়েছে কি না, সেটা নিয়েও জাপানের নীতিনির্ধারকেরা এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।

করোনাভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গ এসে পড়ার মুখে জাপান সরকার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন আবার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা নিয়ে এখন চিন্তাভাবনা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না এলেও দেশের কিছু স্থানীয় প্রশাসন এরই মধ্যে আগ বাড়িয়ে সংক্রমণ সামাল দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। উত্তরের জেলা হোক্কাইডো যেমন গো টু ট্রাভেল নামের জাপান সরকারের ভ্রমণ সহায়তা ভর্তুকি কর্মসূচি থেকে সাময়িকভাবে সরে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দেশের হোটেল ও পর্যটন খাতকে সাহায্য করার জন্য জাপান সরকার এই কর্মসূচি চালু করে। এর আওতায় দেশের ভেতরে ভ্রমণ খরচের মোটামুটি প্রায় অর্ধেক সরকার পরিশোধ করে থাকে। হোক্কাইডো, বিশেষ করে জেলার প্রধান শহর সাপ্পোরোর স্থানীয় সরকার মনে করছে, এই ভর্তুকি কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করে প্রচুরসংখ্যক ভ্রমণকারী সাপ্পোরো ও জেলার অন্যান্য শহরে আসায়, জেলাজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। হোক্কাইডোতে গত শুক্রবার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক গণনা প্রথমবারের মতো ৩০০ ছাড়িয়ে যায় এবং সংখ্যার বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত আছে।

জাপানে শরতে গাছের পাতার রংবদল
ছবি: প্রথম আলো

সংকটাপন্ন পর্যটনশিল্পকে সহায়তা করার জন্য হাতে নেওয়া সরকারের গো টু ট্রাভেল কর্মসূচি এখন নানা দিক থেকে সমালোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত দুয়েক দিনে টানা তিন দিনের লম্বা ছুটির সুযোগ নিয়ে অনেকেই এই কর্মসূচির আওতায় সস্তায় ভ্রমণে বের হতে শুরু করায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না।

জাপানে বছরের এই সময়ে দেশের কোনো কোনো জায়গায় শরতে গাছের পাতা ঝরে পড়ার আগে বিচিত্র নানা বর্ণে সজ্জিত হয়ে উঠলে প্রকৃতি অপরূপ সুন্দর হয়ে ধরা দেয়। বিশেষ করে কিওতো ও অন্য কয়েকটি জেলায় এই দৃশ্য খুবই মনোরম। বলা হচ্ছে, এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানুষের পাশাপাশি যানবাহন চলাচল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে আসায় প্রকৃতি ফিরে পাচ্ছে স্বাভাবিক জীবন এবং শরতের দৃশ্যও এর ফলে হয়ে উঠছে আরও আকর্ষণীয়। এ কারণেই মানুষ এখন করোনা সংক্রমণের ভীতি উপেক্ষা করে ছুটছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

টোকিওর পার্শ্ববর্তী কানাগাওয়া জেলার হাকোনের পাহাড়ি এলাকা এবং কিওতোর অপরূপ সুন্দর আরাশিইয়ামায় দর্শনার্থীদের ভিড় যথাক্রমে দ্বিগুণ ও চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার খবর দিয়েছে জাপানের সংবাদমাধ্যম। হোক্কাইডোতেও পর্যটকের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। মানব চলাচল হঠাৎ করে এতটা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেসব এলাকায় সংক্রমণ নতুন করে আবার মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর এ কারণেই সরকার এখন করোনার সংক্রমণ যেসব এলাকায় বেশি, গো টু ট্রাভেল কর্মসূচি সেখানে স্থগিত রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া লোকজনের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৭। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে রাজধানী টোকিওতে, সংখ্যাটি হলো ৩৮ হাজার ২২।