জাপানে সীমিত পর্যায়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে জরুরি অবস্থা কাজে দেবে বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রী সুগার সরকারছবি: রয়টার্স

জাপানের রাজধানী টোকিও ও এর আশপাশের তিনটি এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সীমিত পর্যায়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার। দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

এর আগে কিছু চিকিৎসক জাপানে বৃহৎ পরিসরে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে সেদিকে যায়নি সরকার।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ শুক্রবার থেকে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টোকিও, সাইটামা, কানাগাওয়া ও চিবা এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি থাকবে। এ এলাকাগুলোতে জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে।

সরকার বলছে, করোনা সংক্রমণের মূল ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো হলো পানশালা ও রেস্তোরাঁ। তাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জরুরি অবস্থা চলাকালে বিধিনিষেধের কেন্দ্রে থাকবে এসব পানশালা ও রেস্তোরাঁ।

এই জরুরি অবস্থার আওতা গত এপ্রিল মাসে জারি করা জরুরি অবস্থার আওতার চেয়ে সীমিত। ওই সময় জরুরি অবস্থা মে মাসের শেষ পর্যন্ত বহাল ছিল। তা জারি করা হয়েছিল দেশজুড়ে। তখন সারা দেশের অধিকাংশ শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদা সুগার সরকার করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি সীমিত রাখতে চাইছে। স্থগিত করা গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের কথাও ভাবছে জাপান সরকার।

জাপানে করোনা সংক্রমণের অন্যতম কেন্দ্র পানশালা ও রেস্তোরাঁ। জরুরি অবস্থা চলাকালে কড়া নজরদারি থাকবে এসব পানশালা ও রেস্তোরাঁর দিকে।
ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী সুগা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি আমাদের ধারণার চেয়ে জটিল পরিস্থিতি ধারণ করেছে। কিন্তু আমার আশা, আমরা এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব। এটি যাতে সম্ভব হয়, সে জন্য আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, তারা যেন কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে জীবনযাপন করে।’

কয়েকজন চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ বলছেন, সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ কার্যকর করার সরকারের এই পরিকল্পনা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় যথেষ্ট না-ও হতে পারে। জাপান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোশিও নাকাগাওয়া বলেন, ‘দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির কথা আমাদের বিবেচনা করতে হতে পারে।’

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি আমাদের ধারণার চেয়ে জটিল পরিস্থিতি ধারণ করেছে। কিন্তু আমার আশা, আমরা এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব। এটি যাতে সম্ভব হয়, সে জন্য আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, তারা যেন কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে জীবনযাপন করে।
প্রধানমন্ত্রী সুগা

বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে জাপানে করোনার সংক্রমণ কম থাকলেও ভাইরাসটির লাগাম পুরোপুরি টেনে ধরে রাখতে পারছে না দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। এদিন বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয় ৭ হাজারের বেশি মানুষের।

সংক্রমণ পরিস্থিতি বেশি খারাপ টোকিওতে। বৃহস্পতিবার সংক্রমণ অনেকটাই বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৪৭ জনে। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৯১। মহামারি শুরুর পর এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। মারা গেছেন প্রায় ৩ হাজার ৯০০ জন।

জাপানের কর্তৃপক্ষ আগামী মাসের শেষ নাগাদ করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার আশা করছে।