টিকা নিয়ে উল্টো পথে ইন্দোনেশিয়া

আচেহ প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টিকা
ছবি: রয়টার্স


করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির শুরুতে যুক্তরাজ্যে প্রথম টিকা পেয়েছিলেন ৯০ বছর বয়সী একজন। কানাডায় যিনি প্রথম টিকা পেয়েছিলেন, তাঁর বয়স ৮৯ বছর।

জার্মানিতে প্রথম টিকা নেওয়া ব্যক্তির বয়স ১০১ বছর। এর পেছনে যুক্তি হলো, প্রবীণেরা ঝুঁকিতে। আগে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া হাঁটল ভিন্ন পথে।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ব্যক্তি যাঁরা কর্মক্ষম, তাঁদের আগে টিকা দেওয়া হবে। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে, তাঁরা আগে টিকা পাবেন।

তুলনামূলক বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার বদলে দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাদিয়া উইকেকো

করোনা মহামারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইন্দোনেশিয়া।

দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২৪ হাজারের বেশি। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে আজ বুধবার। প্রথম ধাপের এ টিকার প্রয়োগ চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। এ সময় প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। এই সংখ্যা ১৩ লাখ। এরপর সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দেওয়া হবে। এই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পুলিশ, সেনাসদস্য, শিক্ষক ও আমলারা রয়েছেন। সরকারি এমন কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ।

ইন্দোনেশিয়ায় দেওয়া হচ্ছে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকা করোনাভ্যাক। টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাদিয়া উইকেকো আল-জাজিরাকে বলেন, তুলনামূলক বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার বদলে দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে, তাঁরা আগে টিকা পাবেন। দেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকার আওতায় না আনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বয়সী ব্যক্তিদের জন্য টিকার পরীক্ষা হয়নি ইন্দোনেশিয়ায়। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘৬০ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তিদের জন্য এ টিকা নিরাপদ কি না, পর্যালোচনা করছে খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। আমরা তাদের পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছি।’

ইন্দোনেশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। তবে সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইন্দোনেশিয়ার ৫৬ বছর বয়সী নারী পুতু। তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁদের চেয়ে বয়স্ক নাগরিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। কারণ, বয়স্করা ঘরে থাকেন।

সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক কিম মুলহোল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছি, চীনে ও মধ্যপ্রাচ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তরুণদের মতো তাঁরাও ভালো আছেন। ফলে ইন্দোনেশিয়া সরকার এই প্রবীণদের ওপর টিকার পরীক্ষা চালায়নি বলে তাঁদের আগে টিকা দেওয়া যাবে না, এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।’

টিকাসংক্রান্ত যেসব গবেষণালব্ধ তথ্য রয়েছে, তার উল্টো দিকে হাঁটছে ইন্দোনেশিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং এরপরই বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া উচিত।