ঠান্ডা মাথায় নির্মম হত্যাকাণ্ড তালেবানের

আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে তালেবনা
ছবি : রয়টার্স

আত্মসমর্পণে উদ্যত আফগান স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিটের ২২ নিরস্ত্র কমান্ডোকে গুলি করে হত্যা করেছে সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা। দেশটির ফারিয়াব প্রদেশের তুর্কমেনিস্তান সীমান্তের কাছে দৌলত আবাদে গত ১৬ জুন এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ওই ভিডিও যাচাই করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, কমান্ডোদের মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওই শহরে তুমুল লড়াইয়ের পর কমান্ডোদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায় এবং তালেবান সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলে। ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে পশতু ভাষায় একজনকে কমান্ডোদের গুলি করতে নিষেধ করতে শোনা যায়।

রেডক্রসের পক্ষ থেকে ২২ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানানো হয়।

তবে আত্মসমর্পণ করা আফগান সেনাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি তালেবান সদস্যদের। পরে তাদের পক্ষ থেকে দৌলত আবাদের আরেকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যাতে সামরিক ট্রাক ও অস্ত্র জব্দ করার বিষয়টি দেখানো হয়। একজন কমান্ডোকে আটক করার বিষয়টিও দেখানো হয়।

তালেবানের পক্ষ থেকে সিএনএনকে বলা হয়েছে, আফগান সেনাদের গুলি করে মারার যে ভিডিও দেখানো হচ্ছে, তা ভুয়া ও সরকারি অপপ্রচার। তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেন, ফারিয়াব প্রদেশে আটক করা ২৪ কমান্ডো এখনো তাদের কাছে আটক রয়েছে।
তবে সিএনএন বলছে, ওই ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ঠান্ডা মাথায় কমান্ডোদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে, আফগানিস্তানে শহরের মধ্যে কোনো লড়াই চায় না বলে জানিয়েছে তালেবান গোষ্ঠী। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য পুরোপুরি প্রত্যাহারের পর দেশটিতে তুরস্কের সৈন্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দেশটিকে সতর্ক করা হয়েছে।

তালেবান নেতা আমির খান মুত্তাকির একটি টুইট পোস্ট করেছেন একজন তালেবান মুখপাত্র। তাতে মুত্তাকি বলেছেন, এখন পাহাড় ও মরুভূমির যুদ্ধ শহরের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। মুজাহিদিনরা শহরের মধ্যে লড়াই করতে চায় না।

মুত্তাকি আরও বলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণ রক্ষা করে গাইডেন্স কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সম্ভাব্য যেকোনো চ্যানেল ব্যবহার করা ভালো, যাতে শহর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি যৌক্তিক চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।’

পৃথক আরেক বিবৃতিতে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পরে কাবুল বিমানবন্দর রক্ষায় তুরস্কের নিরাপত্তা দিতে সম্মতি জানানোর বিষয়টি নিন্দনীয়।

এর আগে কাবুল বিমানবন্দর রক্ষায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় তুরস্ক। এ প্রসঙ্গে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়। এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, বিদেশি সেনারা আফগান ত্যাগ করলে ন্যাটোর প্রতিনিধি হিসেবে তুর্কি সেনারা দেশটির কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আফগানিস্তানে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক তুর্কি সেনা রয়েছেন।