ডুকরে কেঁদে বিবি হাওয়া বললেন, ‘আমি কোথায় যাব’

আফগানিস্তানের পাততিকা প্রদেশে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি বাড়ি
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের পাততিকা প্রদেশের রাজধানী শারানে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছিলেন বিবি হাওয়া। ভূমিকম্পে পরিবারের ১২ সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। ডুকরে কেঁদে বলে উঠলেন, ‘আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় যাব?’ খবর এএফপির।
হাসপাতালের একজন সেবিকা বিবি হাওয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। বিবি বলছিলেন, ‘আমার মন ভেঙে গেছে।’

গত আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। এএফপি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৯। তবে রয়টার্স এ মাত্রা ৬ দশমিক ১ বলে উল্লেখ করেছে।

ভয়াবহ এ দুর্যোগে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের কট্টরপন্থী সরকার। জাতিসংঘ প্রাথমিক হিসাবে বলেছে, দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি আফগানিস্তানে বিধ্বস্ত হয়েছে।

হাসপাতালের যে ঘরটিতে বিবি হাওয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, তার আশপাশের বিছানায় আরও অনেক নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে একজন শাহমিরা। ভূমিকম্পে খুব বেশি আহত হননি তিনি। তাঁর এক বছরের নাতি কোলে শুয়েছিল। ভূমিকম্পে আহত হওয়ায় তার কপালে বড় ব্যান্ডেজ বাঁধা।

শাহমিরার পাশের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে তাঁর আরেক নাতনি। তিনিও ভূমিকম্পে আহত। আরেক ছেলেকে আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এএফপিকে শাহমিরা বলেন, ‘ভূমিকম্পের বিকট শব্দের সময় আমরা সবাই ঘুমিয়েছিলাম। ভূমিকম্পের শব্দ শুনে আমি চিৎকার করে উঠি। ভেবেছিলাম, আমার পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। আমিই হয়তো একমাত্র বেঁচে আছি।’
হাসপাতালটির পাশের ওয়ার্ডে পুরুষদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে এক বাবা তাঁর ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। ছেলেটির পায়ে প্লাস্টার করা।

কাছেই নীল কম্বলের নিচে শুয়েছিল আরেকটি শিশু। তার কপালে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা। সেখানে কালো কালি দিয়ে লেখা ‘জরুরি’। এক হাত ভাঙা। ভূমিকম্পের সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে ২২ বছরের আরাপ খান বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। সব জায়গায় চিৎকার আর কান্নার শব্দ।’

সারান হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া উইয়ার বলেন, ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, যখন হতাহত ব্যক্তিরা এসে পৌঁছাল, তখন চারপাশে কেবল কান্নার শব্দ শোনা গেছে।

ইয়াহিয়া আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ দরিদ্র। সম্পদ অপ্রতুল। এটি মানবিক বিপর্যয়।’
হাসপাতালের পরিচালক ইয়াহিয়া আরও বলেন, স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সামনে শতাধিক মানুষ রক্ত দেওয়ার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন। তালেবানের এক সদস্য বলেন, প্রায় ৩০০ জন সকাল থেকে রক্ত দিয়েছেন।