তাইওয়ানে ট্রেন দুর্ঘটনায় কাঁদলেন ‘দায়ী’ ট্রাকচালক

তাইওয়ানে সেদিনের ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন
ফাইল ছবি, এএফপি

তাইওয়ানে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকচালক ক্ষমা চেয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার সাংবাদিকদের সামনে সবার কাছে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন লি ইহসিয়াং (৪৯) নামের ওই ট্রাকচালক। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবারের রেল দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। তারোকো এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি রাজধানী তাইপে থেকে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের তাইতং শহরে যাচ্ছিল। ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিলেন। পথে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েন শহরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। ট্রেনে থাকা অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক ও ঘরমুখী যাত্রী। এক উৎসবের ছুটির আগে ট্রেনটি যাত্রীতে একদম ভরা ছিল। এমনকি অনেকে দাঁড়িয়েও ভ্রমণ করছিলেন। হুয়ালিয়েনের একটি সুড়ঙ্গে প্রবেশের সময় একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় ট্রেনের চালকও নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

ট্রেনের চালকের হাতে সব মিলিয়ে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় ছিল। এই সময়ের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিল। ইমার্জেন্সি ব্রেক টানারও সুযোগ ছিল না।

গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সামনে ট্রাকচালক লি বলেন, ‘আমি অনুশোচনায় ভুগছি। সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের সব রকম সাহায্য করব। যেটা আমার করা উচিত।’

এএফপির তথ্যমতে, লি তাইওয়ানের রেল বিভাগেরই একজন কর্মচারী। তিনি দেশটির পার্বত্যময় পূর্বাঞ্চলে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা ট্রাকের সঙ্গেই ট্রেনটির সংঘর্ষ হয়। তদন্তকারীরা দেখছেন, ট্রাকটি লাইনের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পড়ে গিয়েছিল, নাকি এর চালক পার্কিং ব্রেক চাপতে ভুলে গিয়েছিলেন।

দুর্ঘটনার পর লিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে জামিন পান তিনি। তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, লিকে পুনরায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

তাইওয়ান ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের চেয়ারম্যান হং ইয়ং এএফপিকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা ট্রেনের রেকর্ডিং ডিভাইসের সব তথ্য একত্র করে দেখছেন। এ ছাড়া ট্রেনের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কয়েকজন যাত্রীর ভাষ্যমতে সংঘর্ষের আগে তাঁরা ট্রেনের হুইসল শুনতে পেয়েছেন। তাঁরা মনে করছিলেন, ট্রেনের চালক সামনে কিছু একটা দেখতে পেয়ে তা বাজিয়েছিলেন। কিন্তু সংঘর্ষ এড়াতে ব্যর্থ হন।

ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের চালকের হাতে সব মিলিয়ে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় ছিল। এই সময়ের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিল। ইমার্জেন্সি ব্রেক টানারও সুযোগ ছিল না। বেঁচে যাওয়া বেশ কয়েকজন যাত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের আগে তাঁরা ট্রেনের গতি কমানোর কোনো লক্ষণ দেখেননি।