তিয়েনআনমেন হত্যাযজ্ঞে অনুতপ্ত নয় চীন

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ার। ছবি: রয়টার্স
বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ার। ছবি: রয়টার্স

তিয়েনআনমেন গণহত্যার ৩০ বছর পূর্তি আজ সোমবার। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রের দাবিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে শত শত ছাত্র-শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার। ওই ঘটনা নিয়ে এরপর কোনোরকম আলোচনা নিষিদ্ধ করে চীন।

তবে তিয়েনআনমেন বিক্ষোভের তিন দশক পর এই প্রথম ওই ঘটনা নিয়ে আলোচনা উসকে দিয়েছে খোদ চীন সরকারই। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় দৈনিক জানিয়েছে, ‘তিয়েনআনমেন বিক্ষোভ দমনে সরকারের কোনো ভুল ছিল না। সরকারের ওই রকম দৃঢ় পদক্ষেপই চীনকে আজ স্থিতিশীল করেছে। চীন এত উন্নতি করতে পারছে।’

প্রথমে এ নিয়ে মন্তব্য করেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেং। গত রোববার সিঙ্গাপুরে এক আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিয়েনআনমেন গণহত্যার ৩০ বছর পর এসে চীন অনুতপ্ত কি না? ওয়েই বলেন, তিয়েনআনমেন বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনই চীনের দ্রুতগতির উন্নতির ভিত গড়ে দিয়েছে। চীনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয় এরপরই।

সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা দ্য গ্লোবাল টাইমস–এর ইংরেজি সংস্করণ এ নিয়ে এক সম্পাদকীয়তে দাবি করেছে, তিয়েনআনমেনের ঘটনায় চীনা সরকারের পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ গোলযোগের হাত থেকে চীনকে সুরক্ষিত করেছে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়া সঠিক পদক্ষেপ ছিল। গ্লোবাল টাইমস চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দ্য পিপলস ডেইলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।

১৯৮৯ সালের এপ্রিল থেকে সরকারের দুর্নীতি বন্ধ ও গণতন্ত্রের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারে অনশন শুরু করে। তার সঙ্গে যোগ দেন শ্রমিকেরা। বিক্ষোভকারীরা মাও সেতুংয়ের ছবির সামনে গণতন্ত্রের দেবীর মূর্তি খাড়া করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ক্ষমতাসীন সরকারকে। ৩ জুন রাতে সেনা ও ট্যাংক নামায় সরকার। ৪ জুন মধ্যরাতে তারা সব দিক থেকে ঘিরে ফেলে তিয়েনআনমেন। বেয়নেট হাতে সেনাদের সামনে সার বেঁধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তিয়েনআনমেন স্কয়ার ত্যাগ করে। তবে স্কয়ারের বাইরে সেনাদের নির্বিচার গুলিতে ততক্ষণে নিহত হন শত শত ছাত্র-শ্রমিক।

তিয়েনআনমেনের গণহত্যার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি চীন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষকদের মতে, তিয়েনআনমেনে সেদিন হাজারের ওপর লোককে হত্যা করেছিল সেনারা। এ নিয়ে চীনা সরকারের কেউই এর আগে কখনো মুখ খোলেননি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই সেং-ই এ বিষয়ে প্রথম কোনো মন্তব্য করলেন এবং তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করে রাষ্ট্রীয় পত্রিকার সম্পাদকীয় প্রমাণ করে, তিয়েনআনমেন নিয়ে চীন সরকারের মনোভাব এখনো বদলায়নি।

গ্লোবাল টাইমস আরও বলেছে, ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেনের ঘটনাই চীনের সঙ্গে অন্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়া যেখানে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে, চীন অখণ্ডতা ধরে রেখে উন্নতি করেছে। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, চীনের ভিন্নমতাবলম্বী, পশ্চিমা রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো কী বলল, তা চীনের তেমন কিছু যায় আসে না। কারণ চীনা সমাজের ওপর এর প্রভাব খুবই নগণ্য।

গণতন্ত্র আন্দোলনকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, তিয়েনআনমেনের ঘটনা চীনের প্রতি ঘৃণা তৈরি করেছে মানুষের। সি চিন পিং ২০১২ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে চীনের গণতন্ত্র আন্দোলনকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের মতপ্রকাশ আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সূত্র: এএফপি ও রয়টার্স, বেইজিং