দক্ষিণ এশিয়ায় এবারের বর্ষা বিপর্যয়কর হতে পারে

চলতি বর্ষা মৌসুমে অঝোর বৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার কিছু অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্য। পানি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে অধিবাসীরা। গতকাল দেশটির রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে কল্যাণীয়ায়
ছবি: এএফপি

দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হচ্ছে এ মাস থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা নতুন এক গবেষণায় দেখেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে ভারতে বর্ষা মৌসুমে আরও বেশি বৃষ্টিপাত হবে এবং তা আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন যে বর্ষা মৌসুমকে বিঘ্নিত করে থাকে, তা আগে থেকেই জানেন গবেষকেরা। আগে কম্পিউটার মডেলভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও উষ্ণ আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বাড়ার কারণে বর্ষায় অতিবৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত ও চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।

নতুন গবেষণা নিবন্ধটি গত শুক্রবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণা নিবন্ধে আগের তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ হাজির করা হয়েছে। নতুন এ গবেষণার জন্য ১০ লাখ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা।

বর্ষা মৌসুম সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে। এ সময় দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে, যা এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অতি প্রয়োজন।

এ বৃষ্টিপাত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক–পঞ্চমাংশ লোকের জীবনে প্রভাব ফেলে, ফসলহানি ঘটায়, মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি করে এবং প্রাণহানি ঘটানোর পাশাপাশি দূষণ বাড়ায়। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তন এ অঞ্চল এবং এর ইতিহাসকে নতুন আকার দিতে পারে।

গবেষকেরা বৃষ্টিপাতের তথ্য বের করতে কাদা নিয়ে গবেষণা করেন। তারা বঙ্গোপসাগরে খনন করে কোরের নমুনা সংগ্রহ করেন। অতিবর্ষার মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে বেশি পরিমাণ স্বাদু পানি প্রবেশ করে। এতে পৃষ্ঠের লবণাক্ততা কমে যায়। সমুদ্রতলপৃষ্ঠে বসবাসকারী প্লাঙ্কটন মারা যায় এবং পলির স্তরে স্তরে ডুবে যায়। গবেষকেরা ওই নমুনা থেকে প্লাঙ্কটনের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করেন। সেখান থেকে অক্সিজেন আইসোটোপ বিবেচনায় নিয়ে পানির লবণাক্ততা বের করেন। তাতে দেখা যায়, অতিবৃষ্টি ও কম লবণাক্ততার বিষয়টি সৃষ্টি হয়েছিল বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই–অক্সাইডের উচ্চতর ঘনত্বের পর।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে মানবসৃষ্ট কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। এতে আমরা আগের মতো বর্ষার ধরন দেখতে পারি।

গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন ক্লিমেন্স। তিনি বলেন, গত ১০ লাখ বছরের তথ্য আমরা যাচাই করে দেখতে পারি, বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই–অক্সাইড বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি বেড়ে গেছে।

জলবায়ু মডেলগুলোর পূর্বাভাস বিগত ১০ লাখ বছরে আমরা যা দেখছি, তার সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থাকা জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউটের গবেষক আন্দ্রেস লেভারম্যান বলেছেন, আগের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যকে সমর্থন করা নতুন গবেষণার ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট।