দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বহর

দক্ষিণ চীন সাগরে টহলরত যুদ্ধবিমানবাহী মার্কিন রণতরি ইউএসএস থিওডর রুজভেল্ট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের একটি বহর। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী আজ রোববার বলেছে, ‘সমুদ্রে অবাধ বিচরণ’ নিশ্চিত করতে গতকাল শনিবার যুদ্ধজাহাজগুলো ওই সাগরে ঢুকেছে।

তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এমন এক সময় এ পদক্ষেপ নিল, যখন চীন–তাইওয়ান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। কারণ, ওই দিনই তাইওয়ান জানিয়েছে, চীনা বোমারু ও যুদ্ধবিমানের একটি বহর এ অঞ্চলের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম মার্কিন সামরিক বাহিনীর রণতরি দক্ষিণ চীন সাগরে ঢুকল। এ নিয়ে চীন আরও ক্ষিপ্ত হতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপসহ নানা ইস্যুতে চীন–মার্কিন সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধজাহাজের ঢুকে পড়ার ঘটনা।

দক্ষিণ চীন সাগরের সিংহভাগ এলাকা চীন নিজের বলে দাবি করে। তবে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনেই ও তাইওয়ানেরও এ সাগরের ওপর দাবি রয়েছে। বিরোধপূর্ণ এ সাগরে প্রায়ই মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি নিয়ে চীন অভিযোগ করে আসছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ইন্দো–প্যাসিফিক কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধবিমানবাহী ইউএসএস থিওডর রুজভেল্ট রণতরির নেতৃত্বে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই যুদ্ধজাহাজগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছে। সমুদ্রে অবাধ বিচরণ ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ অভিযান। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউএসএস থিওডর রুজভেল্টের নেতৃত্বাধীন এ বহরে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বাংকার হিল, ইউএসএস রাসেল ও ইউএসএস জন ফিন।

এদিকে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, তাইওয়ান অভিযোগ করেছে, এ অঞ্চলের আকাশসীমায় শনিবার চীনের আটটি বোমারু বিমান ও চারটি যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়ে। তাইওয়ানের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে ঘটনাটি ঘটে।

চীন তাইওয়ানকে নিজের এলাকা বলে দাবি করে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী তাইওয়ান–নিয়ন্ত্রিত প্রাটাস দ্বীপ এবং তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চল ঘেঁষে সাগরের ওপর দিয়ে নিয়মিতই চীনের উড়োজাহাজ চলাচল করছে। তবে শনিবার যে উড়োজাহাজগুলো তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে, তা উদ্বেগ সৃষ্টিকারী বলে জানিয়েছে অঞ্চলটির কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, চীনের এইচ–৬কে মডেলের বোমারু বিমানগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের বিমানবাহিনী সতর্ক করে চীনের উড়োজাহাজগুলোকে সরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে ওই উড়োজাহাজগুলোর উদ্দেশ্য বুঝতে।

এদিকে এ পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর চীনের প্রতি তাইওয়ানের ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাইওয়ানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেইজিংয়ের প্রতি তাইওয়ানের ওপর সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তাইওয়ানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনা শুরুরও আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া আমরা তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার সক্ষমতা জোরদারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’

এসব বিষয়ে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেইজিংয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে এসব ঘটনাপ্রবাহ শুরুর আগেই গত বৃহস্পতিবার চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। দেশটি বলেছে, তাইওয়ান ইস্যুতে সতর্ক ও যথাযথ নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। না হলে মার্কিন–চীন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বাইডেনের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত বৃহস্পতিবার তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিতের সিনেট শুনানিতে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চীন।