নবজাতকের আকালে জাপান

ফাইল ছবি: এএফপি

জাপানে শিশু জন্মহার কমে যাচ্ছে। প্রায় চার দশক ধরে এই প্রবণতা জাপানে বিদ্যমান থাকলেও এ বছর শিশু জন্মহার সর্বনিম্নে নেমে যায়। জাপানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৫০ সাল থেকে শিশুজন্মের তুলনামূলক উপাত্ত সংগ্রহ করে আসছে।

মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর ১ এপ্রিল জাপানে মোট শিশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার। ১৪ বছর পর্যন্ত যাদের বয়স, জাপানে তারা শিশু হিসেবে গণ্য। ১ বছর আগের তুলনায় শিশুদের সংখ্যা জাপানে ১ লাখ ৯০ হাজার কমে গেছে। এই হিসাব বলছে, ১৪ বছরের বেশি যাদের বয়স হয়েছে, এই তালিকার বাইরে তারা চলে গেলেও নবজাতকের আবির্ভাব তা কোনো অবস্থাতেই পূরণ করতে পারেনি।

দেশের মোট জনসংখ্যায় শিশুদের হারের হিসাবের দিক থেকেও ৪৭ বছর ধরে পতন দেখা গেছে জাপানে। এই হার এখন মাত্র ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ৩৩টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী দিনের সমাজের জন্য পরিষ্কারভাবেই সমস্যার ইঙ্গিত এর মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়। অন্যভাবে জাপানের সমাজে আরও বেশি বৃদ্ধ হয়ে আসার প্রতিফলন এই হিসাব আরও পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত অর্থবছরে জন্ম নেওয়া নবজাতকের মধ্যে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ছিল বালক এবং ৭২ লাখ ৮০ হাজার ছিল বালিকা। শিশুজন্ম এ বছর এতটা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারির সরাসরি কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তার কোনো উল্লেখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি। তবে সমাজ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, অনিশ্চিত সময়ে পারিবারিক বন্ধন অটুট থেকে গেলেও বিশেষ করে সদ্য বিবাহিত অনেক দম্পতি সন্তান গ্রহণ করা থেকে বিরত আছেন। কারণ হিসেবে তরুণ চাকরিজীবীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সেবা খাতে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে আসাকে তাঁরা দায়ী করছেন।

করোনা মহামারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় সেবা খাতকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে এবং এই খাতে কাজ করা নারীদের মধ্যে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এই দলভুক্ত কম বয়সের বিবাহিত নারীরা স্বভাবতই সীমিত আয়ের সংসারে নতুন মুখের আগমন নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী নন। ফলে এর প্রতিফলন এসে পড়ছে দেশের জনসংখ্যার সার্বিক হিসাবে।