নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে, বিক্ষোভ চলছে

মাহিন্দা রাজাপক্ষে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিঙ্কোমালি শহরে একটি নৌঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ওই নৌঘাঁটিও ঘিরে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এসব তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার তুমুল বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তবে তাতেও জনরোষ কমেনি। গতকাল রাতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাজাপক্ষের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা রাজধানীর ‘টেম্পল ট্রিজ’ বাসভবনের মূল দোতলা ভবনে হামলার চেষ্টা করেন।

সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আটকা পড়েন। পরে আজ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই সেনা পাহারায় কলম্বোর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপক্ষে।

শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজাপক্ষের বাসভবন প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০টি পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা একটি হেলিকপ্টারে করে ত্রিঙ্কোমালির নৌঘাঁটিতে পৌঁছান। রাজধানী কলম্বো থেকে ওই নৌঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে।

গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। আজ কারফিউ জোরদার করতে হাজারো সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্পর্কে মাহিন্দা রাজাপক্ষের ছোট ভাই। এক যুগ আগে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতাকামী তামিল টাইগারদের দমন করে দেশটিতে রাজাপক্ষে পরিবারের আধিপত্য তৈরি করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। রাজাপক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট শ্রীলঙ্কাবাসীকে রাজাপক্ষেদের বিরুদ্ধে পথে নামিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারে শুধু তাঁর নিজের পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা
ছবি: রয়টার্স

গতকাল সকালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়েকটি বাসে প্রধানমন্ত্রীর হাজারো সমর্থক তাঁর সরকারি বাসভবনের কাছে জড়ো হন। তখন মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রায় তিন হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি তাঁদের ‘জাতির স্বার্থ রক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকেরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান এবং তাঁদের তাঁবু ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

সংঘর্ষ থামাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানী কলম্বোতে কারফিউ জারি করা হয়। পরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। গণবিক্ষোভের মুখে একপর্যায়ে পদত্যাগ করেন মাহিন্দা।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁর নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য বিরোধী দলগুলোকে প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল এসজেবি আজ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছে দলটি।