‘পক্ষত্যাগী’ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করল মিয়ানমারের জান্তা

রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো তুন

জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো তুনকে গতকাল শনিবার বহিষ্কার করেছে দেশটির জান্তা সরকার। নিজ দেশে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ ছেড়ে তাদের বিরুদ্ধে ‘যথাসম্ভব সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর পর বহিষ্কার করা হলো তাঁকে। খবর এএফপির।

মিয়ানমারে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। এই সামরিক অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার বিষয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবেগঘন বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মো তুন।

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের নিজ দেশের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা বিরল। শুক্রবার মিয়ানমারের প্রতিনিধি সেই কাজই করেন।

আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব। যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকার।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো তুন

অধিবেশনে রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি তাঁর দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। রাষ্ট্রগুলোকে তাঁর দেশের সেনাশাসকদের স্বীকৃতি বা তাঁদের সহযোগিতা না করতেও অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, গত বছর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি জান্তাশাসকেরা যাতে শ্রদ্ধা দেখান, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করা উচিত।

বর্মিজ ভাষায় বক্তব্য শেষে তিন আঙুল উঁচিয়ে স্যালুট দেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনে জান্তা সরকারকে বিদায় করার প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে এভাবে তিন আঙুল উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের স্যালুট প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান ঘটাতে, নিরীহ লোকজনের ওপর নির্যাতন বন্ধে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সম্ভাব্য কঠোরতম পদক্ষেপ প্রয়োজন।

অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। গতকালও রাজধানী নেপিডো, মান্দালয়, ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। মনোয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে এক নারী বিক্ষোভকারীকে গুলি করা হয়েছে। দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংস আচরণ বন্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তুন। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব। যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকার।’