বাইডেনের জাপান সফর, আলোচনা হবে যে বিষয়গুলো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম এশিয়া সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সফর শুরু হচ্ছে কাল শুক্রবার থেকে। পাঁচ দিনের সফর শুরু হবে দক্ষিণ কোরিয়া দিয়ে। কোরিয়া সফর শেষ করেই বাইডেন আসছেন জাপানে। আগামী সোমবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন বাইডেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াড জোটের একটি শীর্ষ বৈঠকেও বাইডেন উপস্থিত থাকবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে এতে যোগ দেবেন।

বাইডেনের সফর ঘিরে একটি বিষয়ের ওপর বিশ্লেষকেরা এখন বেশি আলোকপাত করতে শুরু করেছেন। বিষয়টি হলো, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে চীনের প্রভাবকে সীমিত রাখার প্রচেষ্টায় নতুন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো চালু করা ও সে বিষয়ে ওয়াশিংটনের সম্মতি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ) এ অঞ্চলজুড়ে বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারিত করা ছাড়াও অবকাঠামো, পরিচ্ছন্ন জ্বালানিসহ আরও কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করবে। টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর আইপিইএফ কাঠামো চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাইডেন দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান চাইছে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেন এই কাঠামোয় যোগ দিতে এগিয়ে আসে। এর উদ্দেশ্য, প্রধানত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যদের ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বন্ধ করা। পাশাপাশি ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্যও কাঠামোর দুয়ার খোলা থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উভয় দেশই ভারতকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে গণ্য করে এলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে এদের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কোয়াডের নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠকে তাই চাপের মুখে হয়তো ভারতকে পড়তে হবে। ফলে আইপিইএফ নিয়ে কতটা উৎসাহ ভারত দেখাবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

পাশাপাশি জাপানের সক্রিয় সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করতে যাওয়া এই উদ্যোগ আসিয়ানের সদস্যদের মধ্যেই–বা কতটা সাড়া জাগাতে পারবে, সেটাও এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান—উভয় দেশই অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব একটা শক্তিশালী অবস্থানে এখন আর নেই। ফলে চীনের সঙ্গ ত্যাগ করে এদের দলে ভিড়ে যাওয়া থেকে বাড়তি কী সুবিধা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ওই দেশগুলোর কোনোটি নিশ্চিত নয়। এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য কাঠামো এটি না হওয়ায় সেদিক থেকেও বাড়তি সুবিধা পাওয়া নিয়ে সন্দেহ দেশগুলোর মধ্যে রয়ে গেছে।

বাইডেনের সফর ঘিরে একটি বিষয়ের ওপর বিশ্লেষকেরা এখন বেশি আলোকপাত করতে শুরু করেছেন। বিষয়টি হলো, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে চীনের প্রভাবকে সীমিত রাখার প্রচেষ্টায় নতুন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো চালু করা ও সে বিষয়ে ওয়াশিংটনের সম্মতি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসন্ন জাপান সফরের সময় অন্য যে বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে, তা হলো তাইওয়ান প্রসঙ্গ। তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই কঠোর হচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, তাইওয়ানে চীনের আগ বাড়িয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ রকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমেই আরও বেশি বিস্তৃত হচ্ছে যে চীন রাশিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে তাইওয়ানে সামরিক হামলা চালাতে উৎসাহিত হতে পারে। ফলে চীনকে সতর্ক করে দিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষে থেকে আসা হুমকি ইদানীং বেড়ে চলেছে। জাপানও সেই কাতারে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে যেসব মন্তব্য করছে, চীন সেটাকে উসকানিমূলক হিসেবে দেখছে। ফলে টোকিওতে বাইডেনের অবস্থান করার সময় বিভিন্ন অগ্রগতির ওপর চীন কঠোর নজর রেখে যাবে।

বাইডেনের জাপান সফরে অন্য আরেকটি বিষয় আলোচ্যসূচিতে স্থান পাবে। তা হচ্ছে ইউক্রেন পরিস্থিতি। ইউক্রেন প্রসঙ্গের সূত্র ধরে রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে নিষেধাজ্ঞা কীভাবে আরও সম্প্রসারিত করে নেওয়া যায়, তা নিয়েও দুই নেতা সম্ভবত মতবিনিময় করবেন। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চাইবে জ্বালানি আমদানিসহ জাপান যেন আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করে নেয়। তবে জাপান আগেই উল্লেখ করেছে, বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া থেকে জ্বালানির আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রাখা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া শাখালিন গ্যাস প্রকল্প থেকেও সরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাপান। ফলে সেই দিকগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনায় নতুন কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে হয়তো দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলবে।

তবে এ নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে নেওয়ার বেলায় এখন আরেকটি বাধা হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে দেখা দেওয়া খাদ্যসংকট। রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয় দেশ থেকে আসা খাদ্যের চালান এখন হুমকির মুখে। এ ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম রাসায়নিক সার রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার সার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মুখে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগ নিয়ে আসা নিষেধাজ্ঞা কতটা যুক্তিসংগত, বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পক্ষে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।