বিক্ষোভের আগুনে পুড়ল লিবিয়ার পার্লামেন্ট

লিবিয়ায় বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনের একাংশে আগুন লাগিয়ে দেন।
ছবি : এএফপি

লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসন অবসানের পর থেকে দেশটি বারুদের মতো জ্বলছে। এবার জ্বলল দেশটির পার্লামেন্ট ভবন। জীবনমানের অবনতি এবং নির্বাচনের দাবিতে গত শুক্রবার দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোবরুকে পার্লামেন্ট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ভবনে হামলা চালিয়েছেন এবং আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।

লিবিয়ার স্থানীয় কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে পার্লামেন্ট ভবন এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার ছবি দেখানো হয়। বিক্ষোভকারীদের জ্বালানো টায়ার থেকে ওই ধোঁয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে অন্য গণমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে পার্লামেন্ট ভবনের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। শুক্রবার ছুটির দিনে পার্লামেন্ট ভবন খালি থাকায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বুলডোজার দিয়ে পার্লামেন্ট ভবনের ফটক গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে সহজেই তাঁরা ভবনে ঢুকে পড়েন। সেখানে কর্মকর্তাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পার্লামেন্ট ভবনের দেয়াল ভাঙতে শুরু করেন তাঁরা। আবার কেউ কেউ গাদ্দাফি শাসনের আমলের সবুজ পতাকা ওড়ান। তাঁরা অফিসের কাগজপত্র ছুড়ে ফেলেন।

লিবিয়ায় দুটি সরকার। পুরো দেশ শাসন করার জন্য তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। একটি সরকারের দখলে রাজধানী ত্রিপোলিসহ পশ্চিমাঞ্চল, যার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবাই। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই সরকারের পোশাকি নাম জাতীয় ঐক্যের সরকার (জিএনইউ)।

লিবিয়ায় বহুল প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। কিন্তু সেই নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর তোবরুকভিত্তিক পার্লামেন্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দিবাইয়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁর স্থলে ফাতিহকে নিয়োগ দেয়। তবে এ নিয়োগকে অবৈধ দাবি করে আসছেন দিবাই। দেশটির পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা দখলে থাকা জেনারেল খলিফা হাফতার ও তাঁর বাহিনী লিবিয়া ন্যাশনাল আর্মি বাসাঘাকে সমর্থন দিয়ে আসছে।

পার্লামেন্ট সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নাগরিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এ ধরনের ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ অগ্রহণযোগ্য। এ জন্য নিন্দা জানায় তারা।

তবে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী দিবাই টুইটারে প্রতিবাদকারীদের পক্ষে থাকার কথা বলেছেন। তিনি নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে লিবিয়ার বেশ কয়েকটি তেলের স্থাপনায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সেখানে কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে তাঁদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন।

লিবিয়ান চ্যানেল আল-আহরার শুক্রবার আইনপ্রণেতা জিয়াদ দঘিমকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘লিবিয়ার জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে এবং লিবিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য আমি আমার সহকর্মীদের পাশাপাশি হাই কাউন্সিল অব স্টেটের (লিবিয়ার সর্বোচ্চ উপদেষ্টা পর্ষদ) সদস্যদের সম্মিলিতভাবে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাই।’

আরেক আইনপ্রণেতা বলখেইর আলশাব বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে এবং অবিলম্বে রাজনৈতিক দৃশ্য থেকে সরে আসতে হবে।’

২০২০ সালে সহিংসতা বন্ধ করে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন শান্তিপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচন গত বছরের ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোটের আইনি ভিত্তি নিয়ে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত প্রার্থিতা এবং গভীর মতবিরোধের কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।

জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার বলেছে, দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী লিবিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলোচনা মূল মতপার্থক্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পার্লামেন্টের স্পিকার আগুইলা সালেহ এবং হাই কাউন্সিল অব স্টেটের প্রেসিডেন্ট খালেদ আল-মিশরি নির্বাচনের জন্য একটি খসড়া সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য জেনেভায় জাতিসংঘে তিন দিনের আলোচনায় মিলিত হন। তবে সে আলোচনায় খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।