বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তারদের দুজন ‘পালাতে গিয়ে’ গুলিবিদ্ধ

ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এই পাঁচজনের ছবি দিয়ে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল আসাম পুলিশ। পরে এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
ছবি: আসাম পুলিশের ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দুজন ভোররাতে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে পূর্ব বেঙ্গালুরু পুলিশের ডিসিপি শরনাপ্পা এস ডি এনডিটিভিকে বলেছেন, তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার ভোররাত পাঁচটার দিকে পুলিশ আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে আসামিদের মধ্যে দুজন পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি করে।  গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কয়েকজন মিলে বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬) নামের ওই যুবক ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও ঢাকার এই এলাকার বাসিন্দা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে হাতিরঝিল থানায় হৃদয়সহ পাঁচজনকে আসামি করে মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। তিনি মামলায় বলেছেন, তাঁর মেয়েকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে যান হৃদয়।

শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে গুলিবিদ্ধ দুজনের মধ্যে হৃদয় আছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মেয়েটিকে নির্যাতনের ওই ঘটনা ছয় দিন আগে বেঙ্গালুরুতে ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বেঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে এবং অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতনসহ অন্যান্য অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বেঙ্গালুরু পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা সবাই একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্য। নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে পাচারের উদ্দেশ্যে ভারতে আনা হয়েছিল। ওই তরুণী এখন ভারতের অন্য একটি রাজ্যে আছেন, তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাঁকে পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হবে।

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসাবারাজ বমাই বলেছেন, এই চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত বলে গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁরা সবাই মানব পাচার চক্রের সদস্য বলেও স্বীকার করেছেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এ ঘটনার বিষয়ে সব রাজ্যকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘বেঙ্গালুরু পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই চক্রকে শনাক্ত করেছে এবং দুই নারীসহ তাঁদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা বলেছেন, এর পেছনে আরও লোকজন রয়েছে এবং তাঁরা কেরালায় আছেন। আমরা তদন্ত জোরদার করছি।’

এনডিটিভি বলছে, মেয়েটিকে নির্যাতনের ভিডিও ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে এর প্রতিক্রিয়া বেশি হয়েছে। প্রথমে অনেকে ধারণা করেছিলেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে এই অঞ্চল থেকে নেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আসাম পুলিশ নির্যাতনকারীদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

এক টুইটে নির্যাতনের ভিডিওতে দেখা যাওয়া পাঁচজনের ছবি পোস্ট করে তারা লিখেছিল, ‘এই ছবিগুলো সেই পাঁচ অপরাধীর, যাদের এক তরুণীকে পাশবিক নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে। এই ঘটনার সময় ও স্থান স্পষ্ট নয়। কারও কাছে এই অপরাধ বা অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য থাকলে দয়া করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’

আরও পড়ুন