ভারত-পাকিস্তানে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি

বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর মধ্যে প্রায় এক লাখ দক্ষিণ এশিয়ার। এই রোগীদের অর্ধেকের বেশিই ভারতে শনাক্ত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর মধ্যে প্রায় এক লাখ দক্ষিণ এশিয়ার। এই রোগীদের অর্ধেকের বেশিই ভারতে শনাক্ত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
>ভারত, পাকিস্তান দুই দেশেই প্রায় প্রতিদিন শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনকে। তবু শিথিল হচ্ছে লকডাউন।

করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি ভালোই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বড় দুই দেশে এখন দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ভারতে এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানেও রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজারের বেশি।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে রোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩ লাখ ৩০ হাজারের মতো।

বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর মধ্যে প্রায় এক লাখ দক্ষিণ এশিয়ার। এই রোগীদের অর্ধেকের বেশিই ভারতে শনাক্ত হয়েছেন। এনডিটিভির তথ্যমতে, বাংলাদেশ সময় ১২টা নাগাদ দেশটিতে রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ৫৩৯। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যায় ভারত এখন বিশ্বে ১৪তম। এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে দৈনিক রোগী শনাক্ত হচ্ছিল এক–দেড় হাজার করে। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে তা আড়াই–তিন হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গতকালই শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৩ হাজারের বেশি রোগী। আগের দিন, অর্থাৎ বুধবারও সেখানে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে গতকাল মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জনের। আগের দুদিনের তুলনায় অবশ্য এই সংখ্যা কম। বুধবার দেশটিতে করোনায় মারা যান ১২৬ জন। আর তার আগের দিন, মঙ্গলবার মৃত্যু হয় ১৯৫ জনের। কিন্তু গত মাসের শেষ দিন পর্যন্তও দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৭৫ জন।

এনডিটিভির তথ্যমতে, ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। এখানে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬৫১ জনের। গতকালই মহারাষ্ট্রে মারা গেছেন ৩৪ জন। এই রাজ্যের পর রোগী সবচেয়ে বেশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের এলাকা গুজরাটে। সেখানে গতকাল পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৪০০ জন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রোগী আছেন প্রায় দেড় হাজার। মারা গেছেন ১৪৪ জন।

ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুরেখা ঊর্ধ্বমুখী হলেও দেশটিতে ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। যদিও লকডাউনের মেয়াদ ১৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মার্চের শেষ দিক থেকে এই লকডাউন চলছে ভারতে।

পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন-এর অনলাইনের তথ্যমতে, দেশটিতে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা গতকাল ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৮৫ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় প্রতিদিন আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড–সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অর্ধশতাধিক। অর্থাৎ এই দেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এরপরও দেশটিতে শিথিল করা হচ্ছে লকডাউন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ‘শনিবার (আগামীকাল) ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, এমন একটা সময় আমরা এটা করতে যাচ্ছি যখন আমাদের সংক্রমণ ও মৃত্যুরেখা ঊর্ধ্বমুখী। তারপরও আমরা এটা করছি, কেননা আমাদের জন্য চরম কষ্টের মধ্যে আছে।’

এদিকে সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দিন সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমার পর গত বুধবার আবার বেড়েছে। এদিন দেশটিতে ২ হাজার ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়। ফলে মোট মৃত্যু ৭৫ হাজার ছুঁই ছুঁই। বুধবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি।

বুধবার এক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। দেশটিতে এদিন মারা গেছেন ৬৬৭ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। আক্রান্ত ১ লাখ ২৬ হাজার।

বিবিসির তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে বুধবার মারা গেছেন ৬৪৯ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই দেশে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ লাখের বেশি।

স্পেনের কর্তৃপক্ষ গতকাল জানায়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মারা গেলেন ২৬ হাজার ৭০ জন। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার।

এএফপি জানায়, ইতালিতে কয়েক দিন মৃত্যুর সংখ্যা কম থাকার পর বুধবার আবার তা কিছুটা বেড়েছে। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৩৬৯ জন। এ নিয়ে ইতালিতে মৃত্যু সাড়ে ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। 

রাশিয়ায় গতকাল ১১ হাজার ২৩১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স। এ নিয়ে দেশটিতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে পৌনে দুই লাখ ছাড়াল। রাশিয়ায় গতকাল করোনায় ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে ১ হাজার ৬২৫ জন মারা গেলেন।