মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির ৭৬তম জন্মদিন ছিল আজ শনিবার। সু চির জন্মদিন উদ্যাপনে সমর্থকেরা মাথায় ফুল গুঁজে রাস্তায় নেমেছিলেন। এ সময় তাঁরা সু চির মুক্তি দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ইয়াঙ্গুনে মাথায় ফুল গুঁজে মিছিলে অংশ নেওয়া সমর্থকদের একজন থেট সিও উইন। তিনি বলেন, ‘সু চিসহ সব বন্দীর মুক্তির দাবি করছি আমরা। তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার দুটোই লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। এর পরপরই আটক হন সু চি। তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। জান্তা সরকার অজ্ঞাত স্থান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সু চিকে আদালতের কার্যক্রমে যুক্ত করে। তবে সাধারণের সঙ্গে আলাপ কিংবা নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানানোর সুযোগ নেই তাঁর। মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক বন্দীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন বলেছে, মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৮৭০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
জান্তা সরকারের অভিযোগ, গত বছর নির্বাচনে সু চি ও তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) কারচুপি করেছে। এ ছাড়া সু চির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখা, দুর্নীতি, করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সু চির ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান
মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতি নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বিবিসি জানায়, মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংস আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানানো হয়। আইনগত দিক দিয়ে না হলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এ আহ্বান ও নিন্দা প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গনার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বলেন, ‘বড় ধরনের গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হওয়ার সুযোগ ক্ষীণ হচ্ছে।’
মিয়ানমারের জান্তা সরকার নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব ও অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখতে জাতিসংঘের আহ্বানে সমর্থন করেছে ১১৯টি দেশ। কেবল বেলারুশ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহকারী বড় দুই দেশ রাশিয়া, চীনসহ ৩৬টি দেশ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল।
অনুপস্থিত থাকা কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ সংকট মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য দেশগুলো বলেছে, প্রস্তাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এই দমনপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।