মিথ্যা বলে গ্যাঁড়াকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে

শিনজো আবে
রয়টার্স

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সংসদে ১১৮ বার মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এই মিথ্যা বক্তব্য দেন। এতে গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন তিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাপানি সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের গবেষণা ব্যুরো জানিয়েছে, সংসদের উভয় কক্ষের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ও বাজেট প্যানেলের বৈঠকে রাখা প্রশ্নের যেসব উত্তর আবে দিয়েছেন, তা গুরুত্বসহকারে পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জাপানের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক পার্টির আবেদনের ভিত্তিতে আবের বক্তব্য পরীক্ষা করে দেখা হয়।

গত বসন্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে টোকিওর একটি পার্কে আয়োজিত সমাবেশ অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি তারকা ও রাজনীতি জগতের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। দায়িত্ব পালনের শেষের কয়েক বছর আবে এ রকম সমাবেশ আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আসা নিজের নির্বাচনী এলাকা পশ্চিম জাপানের ইয়ামাগুচি জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের টোকিওতে অবস্থানকালীন থাকা, খাওয়া ও পানাহারের ব্যবস্থা করতে খরচ হওয়া অর্থের সঠিক হিসাব আবে দেননি বলে প্রশ্ন ওঠে। এই বিষয়ে সংসদে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আবেকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব বিরোধীরা রাখলেও তা কণ্ঠভোটে বারবার নাকচ হয়ে যায়।

তবে মিথ্যা বলার নতুন অভিযোগের বিষয়ে টোকিওর কৌঁসুলিরা গত সোমবার আবের বক্তব্য শুনেছেন। আবে অবশ্য নিজে কোনো রকম দায় নিতে রাজি হননি, বরং নিজের কার্যালয়ের দাখিল করা ভুল প্রতিবেদনকে এ জন্য দায়ী করেছেন।

চার বছরের কিছু বেশি সময় ধরে ওই রকম সমাবেশ অনুষ্ঠানে মোট খরচ হয়েছিল ২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের মতো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রাজনৈতিক তহবিল–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই খরচের কথা উল্লেখ না করা। এটাকে অবৈধ পথে খরচ হওয়া অর্থ হিসেবে দেখা হচ্ছে এখন। জাপানে এ–সংক্রান্ত নিয়মকানুন বেশ কঠোর এবং এর লঙ্ঘন রাজনীতিবিদদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিতে পারে। এ কারণেই আবেকে এখন যথেষ্ট বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে হয়তো দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ভেবেছেন, অর্থের পরিমাণ সামান্য, তাই তিনি সহজেই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবেন। আর সে কারণেই সম্ভবত সংসদীয় প্রশ্নোত্তর পর্বে তাঁর মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। তবে দেরিতে হলেও নিজের সেই ভ্রান্ত ধারণার ফাঁদে তিনি কিছুটা হলেও আটকা পড়ে গেছেন। তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যতকে তিনি এখন প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন।

জাপানের সংবাদমাধ্যমে আবের এই মিথ্যা বক্তব্যের খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় কিছুটা হলেও নড়বড়ে অবস্থায় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান। আগামীতে এটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে আরও আলোচনা হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

এমনকি নিজের উত্তরসূরি ইয়োশিহিদে সুগার অবস্থানকেও দুর্বল করে দিতে পারে এই কেলেঙ্কারি। করোনাভাইরাস সামাল দেওয়ায় তেমন কোনো সাফল্য দেখাতে না পারায় সুগা ইতিমধ্যে জনসমর্থন হারাতে শুরু করেছেন।

জাপানে রাজনৈতিক তহবিলসংক্রান্ত আইন বেশ কঠোর। নির্বাচনে সবার জন্য সমান একটি অবস্থান তৈরি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে খরচাপাতির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপিত আছে, যেটা লঙ্ঘিত হলে সাংসদেরা তাঁদের আসনও হারাতে পারেন। শিনজো আবের বেলায় অবশ্য আসন হারানোর মতো বিপদ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ভোটারদের মধ্যে এটা কিছুটা হলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে, যার প্রতিফলন সম্ভবত আগামী নির্বাচনে দেখা যেতে পারে।