বিক্ষোভে অংশ নিলে ২০ বছর জেলের হুমকি

মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের কারাদণ্ডের হুমকি দিয়েছে সামরিক সরকারছবি: এএফপি

মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটির বর্তমান সামরিক সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর কাজে বাধা দিলে বিক্ষোভকারীদের এই সাজা হতে পারে বলে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা বা বিদ্বেষ’ ছড়ালে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

মিয়ানমারে বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় সেনাবাহিনীর সশস্ত্র গাড়ির টহল শুরুর পর নতুন এই আইনের কথা ঘোষণা করা হয়। এর আগে মিয়ানমারের বেশির ভাগ জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে সু চির আইনজীবী কিন মং জ আজ সোমবার বলেন, সু চি আরও দুদিন আটক থাকতে পারেন। আগামী বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর একটি আদালতে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হতে পারেন।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ ফেব্রুয়ারি সু চিসহ মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হন। আজ সোমবার সু চিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।‍

সু চির বিরুদ্ধে তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের অবৈধ ওয়াকি-টকি ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়।

মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল জয়ী হলে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের দমাতে বেশ কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এর মধ্যে অর্থদণ্ডসহ দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়, ‘যারা লিখে বা মৌখিকভাবে, যেকোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে বা সশরীরে উপস্থিত হয়ে’ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে এই আইন কার্যকর করা হবে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওয়েবসাইটে আজ সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধাদানকারীদের সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এ সময় যাঁরা মানুষের মধ্যে ভয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন, তাঁদের তিন বছরের জেল হতে পারে।

এদিকে অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো ইয়াঙ্গুনে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। সেখানে বৌদ্ধভিক্ষু ও প্রকৌশলীদের মিছিল করতে দেখা যায়। রাজধানী নেপিডোতে মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া হয়নি।

মিয়ানমারের টেলিকম অপারেটরদের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটা থেকে আজ সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত তাঁদের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। গার্ডিয়ানের খবরে জানা যায়, স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা পর তা আবার সচল হয়।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে দশম দিনের মতো দেশের অন্যতম শহরগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছেন। কাচিন রাজ্যের মিতকিনা শহরে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। পাঁচজন সাংবাদিককে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা সু চিসহ তাঁদের নির্বাচিত অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।

এর আগে স্থানীয় সময় গত শনিবার ব্যক্তিগত সম্পত্তি তল্লাশি এবং কোনো ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটকের জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার আইনটি বাতিল করে সামরিক সরকার।