মিয়ানমার: লাশের জন্য টাকা নিচ্ছে সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন–পীড়ন চালাচ্ছে সামরিক জান্তা
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ পাওয়ার জন্য পরিবারকে অর্থ গুনতে হচ্ছে। লাশ হস্তান্তরের জন্য পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে দেশটির সেনাবাহিনী। অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে আজ সোমবার সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার ইয়াঙ্গুনের কাছের বাগো শহরে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর রক্তক্ষয়ী হামলা চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই হামলায় অন্তত ৮২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। অধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এই তথ্য জানায়।

মিয়ানমারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন চলছে। এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ৭০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে জানায় এএপিপি। এ ছাড়া সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভের জেরে তিন হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে।

এএপিপির ভাষ্য, শুক্রবার বাগোতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অ্যাসল্ট রাইফেল, রকেটচালিত গ্রেনেড ও হাত গ্রেনেড ব্যবহার করে।

শহরটিতে বসবাসকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনএনকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর শুক্রবারের রক্তক্ষয়ী অভিযানের পর শহর থেকে অনেক অধিবাসী পালিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। নিরাপত্তা বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা ও তল্লাশি চালাচ্ছে। শুক্রবার থেকে শহরে ইন্টারনেট–সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

একই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি শহরের প্রধান সড়কের কাছেই বাস করেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই আসে। তারা ঘাঁটি গড়ে। শুক্রবারের হত্যাযজ্ঞের পর মর্গে লাশের স্তূপ জমে ওঠে।

বাগো ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করে, শুক্রবার যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে মিয়ানমারের জান্তা। তারা লাশের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার মিয়ানমার কিয়াত আদায় করছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৭ হাজার ২০০ টাকার সমান।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। তবে সিএনএন স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি। তা ছাড়া এ ব্যাপারে দেশটির সামরিক বাহিনীর বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করে, গত শুক্রবার বাগোয় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হয়েছিল।

রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্রে সেনাবাহিনী দাবি করে, বাগোর সড়কে থাকা নানান প্রতিবন্ধকতা সরানোর কাজ করছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা করে দাঙ্গাকারীরা। দাঙ্গাকারীরা হাতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে।

মিয়ানমারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস দেশটিতে সহিংসতা বন্ধের জন্য গতকাল রোববার সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অফিশিয়াল টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, বাগোসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে অর্থহীন প্রাণহানির ঘটনায় তারা শোকাহত। দেশটির বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী যে সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় টুইটে। টুইটে বলা হয়, সংকট সমাধানের সক্ষমতা সেনাশাসকদের রয়েছে। সহিংসতা ও হামলা বন্ধ করে তার সূত্রপাত করা দরকার।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সেখানে টানা বিক্ষোভ চলছে। সহিংস দমন-পীড়নে প্রাণহানি সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা তাঁদের সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।