মিয়ানমারে আবারও গুলি চালাল পুলিশ, নিহত ১

মান্দালয়ে রাস্তায় নেমে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ করেন ইঞ্জিনিয়ারেরা ও শিক্ষার্থীরা।
ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভে প্রাণহানি বেড়েই চলছে। আজ শুক্রবারও মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এতে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গ্রেপ্তার হওয়া দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্য নেতাদের মুক্তির দাবিতে আজকে বড় বড় শহর ও নগরে বিক্ষোভ হয়।

দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রস্তর যুগের দিন শেষ। তোমাদের (জান্তা সরকার) হুমকিতে আমরা আর ভয় করি না।’ বলে স্লোগান দেন। এ সময় তাঁদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। টেলিফোনে এক চিকিৎসক ও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে নিশ্চিত করেন, আজ শহরটিতে পুলিশের গুলিতে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। সেই বিক্ষোভ দমনে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানী নেপিডোতে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স


এদিকে প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসেন প্রায় ১০০ চিকিৎসক। এ সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও শব্দবোমা নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমে অবস্থিত পাথেইন শহরে বিক্ষোভে অনেক নারী সু চির মুক্তির দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন।


গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজারো মানুষ।

আরও পড়ুন
ইয়াঙ্গুনে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা
ছবি: এএফপি

জাতিসংঘ জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গত বুধবার ১ দিনে ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। সারা দেশে আটক করা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি লোককে, যাঁদের মধ্যে আছেন ২৯ সাংবাদিকও।

মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী নিজ দেশের মানুষের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এটা ‘জাতীয় লজ্জা’। তিনি সহিংসতা বন্ধ করে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর দমন–পীড়ন ও অভ্যুত্থানের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। মিয়ানমারে সামরিক রসদ রপ্তানির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক পণ্যের সুবিধা পেতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অনুমতি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাঁদের অপরাধের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন