মিয়ানমারে ‘উন্মুক্ত কারাগারে’ রোহিঙ্গারা

রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার চিহ্নএএফপির ফাইল ছবি

মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত রাখাইন রাজ্যের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ‘অত্যন্ত নোংরা ও মানবেতর পরিস্থিতির’ মধ্যে বসবাস করছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের অবিলম্বে এমন ‘স্বেচ্ছাচারী ও অনির্দিষ্টকালীন’ বন্দিদশা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, এইচআরডব্লিউ বলেছে, গণ–আটক অবস্থার পরিস্থিতিতে বসবাস করা এই রোহিঙ্গাদের শিবিরগুলো যেন এক একটি ‘উন্মুক্ত কারাগার’।

প্রতিবেদনের রচয়িতা শায়না বাউচনার বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে আট বছর ধরে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে অন্তরীণ করে রেখেছে। নিজেদের বাড়িঘর, জমিজমা, জীবন–জীবিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে তাঁদের। এই অবস্থা থেকে তাঁদের উত্তরণের আশা সামান্যই।’

রোহিঙ্গাদের নির্যাতন–নিপীড়ন থেকে রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করানোর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতেন। তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশটিতে বাস করে আসছেন। কিন্তু সরকার তাঁদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে থাকে। তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে, এমনকি রোহিঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে সরকার।

২০১৭ সালে রাখাইনে নিষ্ঠুর সেনা অভিযান শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগের দফায় ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন শুরু হলে আড়াই লাখের বেশি নারী–পুরুষ মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই সময় আরও অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে ঠাঁই নেন।

আর বর্তমানে রাখাইনজুড়ে বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তাঁরা এখনো রয়েছেন সেনাবাহিনীর আতঙ্কে। সেনাসদস্যরা তাঁদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখেন।

বসবাসের অনুপযোগী
এইচআরডব্লিউর ১৬৯ পৃষ্ঠার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে থাকছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। জীবন–জীবিকার উপকরণের ভীষণ ঘাটতি ও চলাফেরার সীমাবদ্ধতায় রয়েছেন তাঁরা। শিবিরের একজন বাসিন্দাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এসব শিবির বসবাসের উপযোগী নয়।’

রাখাইনে নেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। বিদেশি সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশের ওপরও রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। চলতি বছরের শুরুর দিকে রাখাইনে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি সফরে আল–জাজিরার সাংবাদিক শিবিরগুলোতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে দেখেছেন রোহিঙ্গাদের। আরও দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে সব সময় কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আতঙ্ক।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিবিরগুলোর যে পরিবেশ, তা ক্রমেই রোহিঙ্গাদের জীবনধারণ ও তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো বিষয়কে হুমকির মুখে ফেলছে। তাঁদের মধ্যে অপুষ্টি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও ব্যাপক।

রোহিঙ্গাদের নির্যাতন–নিপীড়ন থেকে রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করানোর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।