মিয়ানমারে একের পর এক ‘রহস্যময় বিস্ফোরণ’

মিয়ানমারে তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করছেন গণতন্ত্রপন্থীরা
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে আজ রোববার হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। আয়োজকেরা বলছেন, বিশ্বকে নাড়া দিতেই মিয়ানমারের জনগণ প্রতিবাদী কণ্ঠ তুলেছেন। এদিকে মিয়ানমারে একের পর এক ‘রহস্যময় বিস্ফোরণ’ ঘটছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারে গত ফেব্রুয়ারিতে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী মানুষ টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখিয়ে যাচ্ছেন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দমনে দেশটির সামরিক জান্তা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার রক্তক্ষয়ী দমনপীড়নে এখন পর্যন্ত ৭৫৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। দেশটির পর্যবেক্ষক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স এই তথ্য জানিয়েছে। তবে দেশটির সামরিক জান্তা প্রাণহানির এই সংখ্যা স্বীকার করে না।

এ ছাড়া দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামরিক জান্তার দমনপীড়ন সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আজকের কর্মসূচির আয়োজকেরা বলছেন, তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আয়োজন করেছেন। মিয়ানমারের জনগণের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর দিয়ে বিশ্বকে নাড়া দিতেই তাঁদের এই আয়োজন।

ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়।

শান রাজ্যে গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মান্দালয়ে সাদা পোশাকে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যের গুলি ছুড়তে উদ্ধত হওয়ার ছবি প্রকাশ করেছে ইরাবতী সংবাদ সাইট। তবে সেখানে হতাহতের কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনার বিষয়ে জান্তার মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহীদেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। গত তিন মাসে দেশটিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই জোরদার হয়েছে। এই লড়াইয়ের মুখে হাজারো বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে ‘রহস্যময়’ বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কে বা কারা এই বিস্ফোরণগুলো ঘটাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। বিস্ফোরণগুলোর দায় এখন পর্যন্ত কেউ নেয়নি।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের গতকাল শনিবারের সন্ধ্যার প্রধান বুলেটিনে বলা হয়, আগের ৩৬ ঘণ্টায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১১টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ বিস্ফোরণই ঘটেছে প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে। বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের তথ্য নেই।

মিয়ানমারের একটি গণমাধ্যমে বলা হয়, আজ রোববার সকালে ইয়াঙ্গুনের একটি পুলিশ ব্যারাকের বাইরে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে একাধিক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এই বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য গণমাধ্যমটিতে জানানো হয়নি।

পরে একই গণমাধ্যম একই শহরে আরও একটি বিস্ফোরণের তথ্য জানায়।

এদিকে শান রাজ্যের একটি নিউজ পোর্টাল সেখানে একটি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। তারা বলছে, একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ীর বাড়ির বাইরে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে বলা হয়, কিছু দাঙ্গাবাজ, যারা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা চায় না, তারাই সরকারি ভবন বা সড়কে হাতে তৈরি বোমা নিক্ষেপ বা পুঁতে রাখছে।

গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু দেশটির ক্ষমতাশালী সেনাবাহিনী এই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। তারা গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। গ্রেপ্তার করে অং সান সু চিসহ দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের। তারপর থেকে দেশটিতে নানাভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।