মিয়ানমারে জান্তা ঠেকাতে নারীদের ‘লুঙ্গি ব্যারিকেড’

মিয়ানমারে মনে করা হয় নারীদের ঝুলন্ত পোশাকের নিচ দিয়ে যাওয়াটা তাঁদের পৌরুষত্বের জন্য অবমাননাকর
ফাইল ছবি: এএফপি

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন দিন দিন জোরদার হচ্ছে। বিক্ষোভ দমাতে সরকারও বসে নেই। প্রায় প্রতিদিন গুলি হচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এই অবস্থায় সেনা–পুলিশ ঠেকাতে অভিনব এক উপায় বেছে নিয়েছেন মিয়ানমারের নারীরা। সেনা ও সাজোয়া যানের গতিরোধে পথে পথে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে নারীদের পরনের লুঙ্গি! খবর এএফপির।

মিয়ানমারের নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক লুঙ্গি। ঊর্ধ্বাঙ্গে ব্লাউজের সঙ্গে শরীরের নিচের অংশে রঙিন লুঙ্গি পরেন তাঁরা। আমাদের দেশে যদিও এ পোশাক থামি নামে পরিচিত। তবে মিয়ানমারে তা লুঙ্গি নামে সবাই চেনে। চলমান আন্দোলনে জান্তার বিরুদ্ধে অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এ লুঙ্গি।

শুধু কী লুঙ্গি, পথের ব্যারিকেডে শোভা পাচ্ছে নারীদের স্কার্ট, পাজামাসহ রংবেরঙের নানান পোশাক। মূলত শরীরের নিচের অংশে ব্যবহার হওয়া পোশাক ব্যারিকেডে ব্যবহার হচ্ছে। সেনা চলাচলের পথগুলোয় আড়াআড়ি রশি বেঁধে সেখানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এসব পোশাক। এমনকি পথের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে নারীদের পোশাক। এতে কাজও হচ্ছে। অনেক এলাকা মাড়াচ্ছেন না নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন।

মিয়ানমারের লোকসমাজে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। দেশটির আন্দোলনকর্মী থিনজার সুন লেই ই জানান, এখানকার পুরুষদের বিশ্বাস, নারীদের ঝুলন্ত পোশাকের নিচ দিয়ে যাওয়াটা তাঁদের পৌরুষত্বের জন্য অবমাননাকর। এতে তাঁদের পৌরুষের গর্ব ভূলুণ্ঠিত হবে। মূলত এ কারণে রাজপথে নারীদের লুঙ্গি ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে যেতে চাইছে না সেনা-পুলিশরা।

এমনকি পথের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে নারীদের পোশাক। এতে কাজও হচ্ছে।
ফাইল ছবি: এএফপি

আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনা–পুলিশের জন্য নারীদের এ লুঙ্গি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়া কোনো বিষয়ই না। তবে বাস্তবে তা ঘটছে না। এ ব্যারিকেড ভাঙতে নারাজ সেনা বা পুলিশ। এমনকি রাস্তায় আড়াআড়ি ঝুলতে থাকা নারীদের পোশাকের নিচে দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে তাদের ঘোর আপত্তি।

থিনজার সুন লেই বলেন, চলমান বিক্ষোভে জান্তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নারীদের এটা একটা রক্ষণাত্মক কৌশল।

গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

এরপর থেকে টানা বিক্ষোভ করে আসছেন মিয়ানমারের জনগণ। দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালায়। জাতিসংঘ জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি লোককে, যাঁদের মধ্যে আছেন ২৯ জন সাংবাদিকও। জাতিসংঘের পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।