মিয়ানমারে জান্তার নিশানায় চিকিৎসাকর্মীরা

মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসাকর্মীরাও নানাভাবে অংশ নিচ্ছেন
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে চিকিৎসাকর্মীদের নিশানা করছে দেশটির সামরিক জান্তা। দেশটির চিকিৎসাকর্মীরা প্রায় নিয়মিত জান্তার হয়রানি, হামলা, দমন-পীড়ন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গতকাল শনিবার দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারে চলমান সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই তাতে অংশ নিচ্ছেন দেশটির চিকিৎসাকর্মীরা। তা ছাড়া তাঁরা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাও করছেন। আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ। এসবের অংশ হিসেবে চিকিৎসাকর্মীদের নিশানা করেছে জান্তা।

দেশটির চিকিৎসাকর্মীরা বলছেন, জান্তা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত স্থাপনায় দিনরাত হানা দিচ্ছে। তারা তল্লাশি চালাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে হামলা করছে। চিকিৎসাকর্মীদের আটক বা গ্রেপ্তার করছে। কাউকে কাউকে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি তাঁদের কোনো কোনো সহকর্মী প্রাণও হারিয়েছেন।

ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের রাহা ওয়ালা বলেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও জাতীয় ধর্মঘটে অংশ নেওয়ায় চিকিৎসাকর্মীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে দেশটির সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারের চিকিৎসাকর্মীদের ভাষ্য, দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসাকর্মীদের আটক বা গ্রেপ্তারের তথ্য প্রায় প্রতিদিনই আসছে। ক্লিনিক, বিক্ষোভের স্থান, এমনকি বাড়ি থেকে তাঁদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিছুসংখ্যক চিকিৎসাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি।

দেশটির ইয়াঙ্গুন শহরের এক চিকিৎসক গোপন স্থান থেকে বলেন, চিকিৎসাকর্মীদের আটক করার পর তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাঁদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

গত সপ্তাহে অর্থোপেডিক সার্জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিউ মিন সোকে তাঁর ইয়াঙ্গুনের বাসভবন থেকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁর দুই হাত পিছমোড়া করে শক্ত করে বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুধু ইয়াঙ্গুন নয়, দেশটির অন্যান্য এলাকায়ও চিকিৎসাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে জান্তা। চিকিৎসাকেন্দ্রে চালানো হচ্ছে অভিযান।

অধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে ৭০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার-আটক হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা হাজারো।

এএপিপি জানায়, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

নিহত চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে নার্সিং শিক্ষার্থী থিনজার হেইন (২০) আছেন। তিনি আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় গত ২৮ মার্চ গুলিতে নিহত হন। থিনজার সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছিলেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য তিনি অন্যদের এ-সংক্রান্ত কৌশল শিখিয়ে ছিলেন।

দেশটির মান্দালয় শহরের এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের অবস্থা এমন, যেন আমরা বর্বরদের মুখোমুখি।’

ওই চিকিৎসক জানান, এক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টাকালে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অথচ তাঁদের গায়ে তখন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পোশাক ছিল।

একই চিকিৎসক আরও জানান, গত ২৭ মার্চ এক আহত ব্যক্তিকে তোলার সময় অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনী।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সেখানে টানা বিক্ষোভ চলছে। সহিংস দমন-পীড়নে প্রাণহানি সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা তাঁদের সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।