নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি জান্তার

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুনছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের জান্তা সরকার পুনরায় দেশটিতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন এ আশ্বাস দেন।

ফেসবুকে এই সংবাদ সম্মেলন লাইভ করা হয়। যদিও দেশটিতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা সরকার। এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের আয়োজন করা ও বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’

দীর্ঘদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছে নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হলেও কবে নাগাদ এ নির্বাচন হতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। ক্ষমতা দখলের পরপরই দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে জান্তা সরকার।

সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেওয়া সাংবাদিকদের একাংশ
ছবি: রয়টার্স

জাও মিন তুন বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি...নির্বাচন হবে।’ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে চলবে।’

মিয়ানমারে চলতি মাসের প্রথম দিনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে দিনে দিনে। বিক্ষোভ রুখতে সরকারও একটু একটু করে চড়াও হচ্ছে। এমন অবস্থায় সেনা সরকারকে ‘ভয়ানক পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয় ১ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক জেনারেল ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়েকে। এই অভ্যুত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ গত নভেম্বরের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। এরপর পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, সু চিসহ শীর্ষ নেতাদের প্রথমে আটক এবং পরে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয় মিয়ানমারে।

ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ছবি: রয়টার্স

গ্রেপ্তারের পর অং সান সু চির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বেশ অস্বাভাবিক। ক্ষমতাচ্যুত করার দুই দিন পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সু চি আমদানি-রপ্তানি আইন ভঙ্গ করেছেন। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ওয়াকিটকি পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট মিন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ লঙ্ঘন করেছেন প্রেসিডেন্ট।

এই সেনা অভ্যুত্থানের পর সু চি কিংবা প্রেসিডেন্ট মিন্টকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জানিয়েছিল, সু চি ভালো আছেন।