মিয়ানমারে ভবন থেকে বিক্ষোভে গুলি, নিহত ২

পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে বিক্ষোভকারীরা ঢাল ব্যবহার করেন। আজ ইয়াঙ্গুনে
ছবি: এএফপি

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে আবারও ঝরল প্রাণ। আজ সোমবার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মিতিনায় গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর দিন দিন হতাহতের সংখ্যা বাড়লেও রাজপথে জোরালো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আজও দেশের বড় বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, মিতিনা শহরের একটি সড়কে দুজনের লাশ পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তাঁরা একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের ওপর শব্দবোমা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। তখন পাশের ভবন থেকে ছোড়া হয় গুলি। এতে গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন।

লাশগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহায়তাকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, দুজনের মাথায় গুলি করা হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনজন আহত হয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিককে এভাবে হত্যা করা খুবই অমানবিক। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।’

ঢাল ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়েই বিক্ষোভে অংশ নেন মানুষ। আজ ইয়াঙ্গুনে
ছবি: এএফপি

ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিক্ষোভস্থলের পাশেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকলেও বিক্ষোভকারীদের ওপর কারা গুলি ছুড়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত নন তিনি।

গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গ্রেপ্তার করা হয় সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। জাতিসংঘ বলছে, বিক্ষোভের পর থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে সাংবাদিকসহ এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।

জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক তিন আঙ্গুল দেখিয়ে এক নারীর বিক্ষোভ। আজ ইয়াঙ্গুনে
ছবি: এএফপি

আজ ফেসবুকে পোস্ট করা বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় এবং অন্যান্য শহরে জড়ো হয়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলের দাউই শহর নিয়ন্ত্রিত করে সশস্ত্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। ওই শহরেও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই দিনে বিক্ষোভেও ছিল বৈচিত্র্য। অনেক নারী আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রঙের সঙ্গে মিল রেখে বিশেষ পোশাক পরে বিক্ষোভে যোগ দেন।

এদিকে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠোর নজরদারি করছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভ দমাতে জান্তা সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দাবি করেছে। এরই মধ্যে জান্তা সরকারের প্রতি অসহযোগ আন্দোলনও তীব্র হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা (ইউনিয়ন) অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে কাজ বন্ধ রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সু চির সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা ওই আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায়।