মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের আহবান যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭ দেশের

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকার রাজপথে চলছে জান্তা ও সেনাশাসনবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর তুমুল লড়াই
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের জান্তার প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ছয় মিত্রদেশ। দেশটিতে ভবিষ্যৎ সহিংসতার আশঙ্কা থেকে গত শুক্রবার এ আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ইয়াঙ্গুনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে অন্য দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের প্রতিবেদনে আমাদের গভীর উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করছি।’ যুক্তরাষ্ট্রসহ এ বিবৃতিতে সই করেছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা ও অস্ত্র হস্তান্তর বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া দেশটিতে কোনো কারিগরি সহায়তা বন্ধেরও আহ্বান জানানো হচ্ছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিম মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পাশাপাশি সাগাইং এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলে যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন মিলেছে। চিন রাজ্যের থ্যান্টলাং গ্রামে সামরিক বাহিনী ঘরবাড়ি, গির্জা ও এতিমখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে ১ হাজার ৩০০ সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি নাগরিক।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সাতটি দেশের পক্ষ থেকে জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মজুত করার অভিযোগ, গোলাবর্ষণ বিমান হামলা, ভারী অস্ত্রের ব্যবহার ও শত শত সেনা জড়ো করা নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার যে তথ্য তুলে ধরেছেন, তাতে দেশটিতে ভবিষ্যৎ সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে ভবিষ্যৎ নৃশংসতা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করছি।’

গত অক্টোবর মাসে ওয়াশিংটনের পক্ষ থকে চিন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর ঘৃণ্য আক্রমণের নিন্দা জানানো হয়। এরপর সেখানে ১০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস ও গির্জা পুড়িয়ে দেওয়ার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সু চির সরকারকে সরিয়ে জান্তা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে মিয়ানমারে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে ১ হাজার ৩০০ সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি নাগরিক। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) নামের একটি সংস্থা এ তথ্য জানায়।

এদিকে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে বারবার আক্রমণের মাধ্যমে জনগণকে ক্ষুধার্ত থাকতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

মিয়ানমারের বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদ বলেছে, জান্তা সেনারা খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। খাদ্য ও ওষুধ আনার জন্য ব্যবহৃত রাস্তা কেটে রেখেছে। গবাদিপশু হত্যা করেছে। কৃষকদের ফসল তুলতে দিচ্ছে না।

বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদে আগে জাতিসংঘের হয়ে মিয়ানমারে কাজ করেছেন এমন বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) নামে পরিচিত মিয়ানমারের বিকল্প সরকারের সঙ্গে কাজ করা উচিত।