মিয়ানমারে সেভ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মী নিখোঁজ
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, মিয়ানমারে তাঁদের দুজন কর্মীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে সেনা অভিযানে ৩০ জনের বেশি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ। খবর বিবিসির।
সেভ দ্য চিলড্রেন আরও বলেছে, শুক্রবার কায়াহ রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা লোকজনকে গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করেছেন, কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করেছেন, আবার কাউকে হত্যা করে মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়েছেন। হামলা চলার সময় সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মীদের ব্যক্তিগত গাড়িকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
শনিবার স্থানীয় কারেনি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, হাপ্রুসো শহরের মো সো গ্রামের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নিহত বৃদ্ধ, নারী, শিশুসহ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের পোড়া মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে তারা। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলেছে, শুক্রবার সেনাসদস্যরা ওই গ্রামে বিরোধী সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েকজন ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী’কে গুলি করে হত্যা করেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন তুন এএফপিকে বলেছেন, হাপ্রুসো শহরে সেনাসদস্যরা সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে সাতটি গাড়িকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাত শুরু হলে সেনাসদস্যরা কয়েকজনকে হত্যা করেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি জ মিন তুন।
শনিবার সেভ দ্য চিলড্রেনের এক বিবৃতিতে ওই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৮ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, মানবিক সহায়তা প্রদানের কাজ স্থগিত থাকায় তাদের দুই কর্মী বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁদের সন্ধান মিলছে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে এবং তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী ইংগার আশিং বলেন, ‘নির্দোষ বেসামরিক জনগণ ও আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এ সহিংসতার ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। এই কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ নিয়ে মানবিক সহায়তামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মিয়ানমারে সংকটে থাকা লাখো শিশুকে সহায়তা দিচ্ছিলেন তাঁরা।’ এ ঘটনায় তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, হাপ্রুসো শহরে হামলার পর বিভিন্ন জায়গায় গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।
স্থানীয় কারেনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স জান্তাবিরোধী বেসামরিক মিলিশিয়াদের অন্যতম বড় সংগঠন। তারা বলছে, নিহত ব্যক্তিরা তাদের সদস্য নন, বরং সংঘাত থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে থাকা বেসামরিক নাগরিক। ওই গ্রুপের এক কমান্ডার রয়টার্সকে বলেন, ‘শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষদের মৃতদেহগুলো দেখে আমরা ভীষণ হতবাক হয়েছি।’
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এবং তাঁকে কারাবন্দী করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এর পর থেকেই দেশটিতে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে।