মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বালন

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন গণতন্ত্রপন্থীরা
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে গত কয়েক দিনে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মোমবাতি প্রজ্বালনের কর্মসূচি পালন করেছেন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা। মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ নন—এমন কর্মীদের সে দেশ ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৫২১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৪১ জনই নিহত হয়েছেন গত শনিবার। দেশটির বিভিন্ন শহরে গতকাল মঙ্গলবারও অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এই তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারে আগেও প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্বালনের কর্মসূচি পালন করেন গণতন্ত্রপন্থীরা। কারফিউ উপেক্ষা করে গতকাল রাতে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে নতুন করে মোমবাতি প্রজ্বালনের কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া অন্তত একটি স্থানে বুধবার ভোর নাগাদ বিক্ষোভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা–অধ্যুষিত একাধিক সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাত জোরদার হয়েছে। সংঘাতের মুখে সেখানকার লোকজন সীমান্ত অতিক্রম করছেন।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করে সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের মুখেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও আটক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক নাগরিক নিহত হওয়ার তথ্য এএপিপি দিলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে বলা হচ্ছে। গ্রেপ্তার আছে হাজারো মানুষ।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দা-সমালোচনা চলছে। মিয়ানমারের জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানাভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

মিয়ানমারে গণ-অসন্তোষের আশঙ্কায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ নন—এমন কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সে দেশ ত্যাগ করতে গতকাল নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতার প্রতিবাদে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জান্তা সরকারের ওপর চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আজ বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা। যুক্তরাজ্য জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।