মিয়ানমারের এক মুখ্যমন্ত্রীসহ ৯০০০ জন পালিয়ে ভারতে

মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের চিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম সালাই লিয়ান লুয়াই
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত দেশটির নয় হাজারের বেশি নাগরিক ভারতের মিজোরাম রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মিয়ানমারের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও আছেন। আজ বুধবার মিজোরামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের তথ্যমতে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত দেশটির ৯ হাজার ২৪৭ জন নাগরিক আশ্রয়ের জন্য মিজোরামে প্রবেশ করেছেন।

মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে চিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ দেশটির ক্ষমতাচ্যুত দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা রয়েছেন।

রাজ্যটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমারের ২৪ জন আইনপ্রণেতা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আশ্রয় নিয়েছেন।

মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের চিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম সালাই লিয়ান লুয়াই। তাঁকে ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। গত সোমবার রাতে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন।

চিন রাজ্যটি মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এ রাজ্যের সঙ্গে মিজোরামের ছয় জেলার ৫১০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

মিজোরামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেককে রাজ্যের স্থানীয় লোকজন আশ্রয় ও খাবার দিচ্ছেন।

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ত্রাণসহায়তা দেওয়ার জন্য তাঁর সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছে। বরাদ্দ করা এই অর্থ খুব শিগগির ছাড় দেওয়া হবে।

মিয়ানমারে গত বছরের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন অং সান সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয় পায়। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা অভিমত দেয়। তবে এই নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ আনে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এ অভিযোগ নাকচ করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অজুহাত তুলে দেশটির সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান করে। তারা সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাতের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে সু চিসহ দেশটির রাজনৈতিক ও গণতন্ত্রপন্থীদের গ্রেপ্তার করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে।

সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেনাশাসনবিরোধী এই বিক্ষোভে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া সাড়ে চার হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে।