মোদিকে ইভেন্টবাজি বন্ধ করতে বললেন রাহুল

নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী
ফাইল ছবি

সংক্রমণের নিরিখে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভারতের উঠে আসার দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘ইভেন্টবাজি’ বন্ধ করার আবেদন জানালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বললেন, অবিলম্বে করোনার টিকা রপ্তানি বন্ধ করে কর্মহীন দরিদ্র ভাইবোনদের আর্থিক সহায়তা করুন।

আজ সোমবার ভারত সংক্রমণের হিসেবে ব্রাজিলকে ছাপিয়ে যায়। সোমবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৬৮ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ফলে ভারতে মোট সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা এদিন পৌঁছায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৭১৭। ব্রাজিলে মোট সংক্রমিত ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ২৩। এক নম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, সংক্রমণ ৩ কোটি ১২ লাখ।

পরিস্থিতির মোকাবিলায় সোমবারই ভারতের কোভিড সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কমিটি রাশিয়ার ‘স্পুতনিক–ভি’ টিকা প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার অনুমতি পেলে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের পর স্পুতনিক–ভি হবে ভারতের তৃতীয় টিকা। ভারতে এই টিকা তৈরি করছে ‌‘ডক্টর রেড্ডিজ’। বর্তমানে এর তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। সরকারি সূত্রের খবর, জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও পাঁচটি টিকা চলে আসবে। স্পুতনিক–ভি ছাড়া অন্য টিকাগুলো হলো জনসন অ্যান্ড জনসন, নোভাভ্যাক্স, জাইডাস ক্যাডিলা ও ভারত বায়োটেকের ইন্ট্রান্যাজাল।

ভারতের অবস্থা আগামী দিনে আরও কত খারাপ হতে পারে—এই মুহূর্তে সেই হিসেব কারও নেই। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের পরিচালক রণদীপ গুলেরিয়া শুধু বলেছেন, দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি ভয়ংকর। কতটা ভয়ংকর, তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, করোনা নতুন ধরন সংক্রমিত করছে ৮০–৯০ শতাংশকে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুহার সব রেকর্ড নিত্য ভেঙে দিচ্ছে। অথচ এ অবস্থায় যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শিকেয় তুলে উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় চলছে হাজার হাজার মানুষের পুণ্যস্নান! বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা উপেক্ষা করে কুম্ভস্নানের অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। কয়েক লাখ মানুষের এই জমায়েতের মাশুল কীভাবে দিতে হবে, সেই ধারণা কোনো মহলেই নেই।

যেমন নেই এক মাস ধরে চলা পাঁচ রাজ্যের ভোট শেষ হলে দৈনিক সংক্রমণ কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, সেই ধারণাও। পশ্চিমবঙ্গের ভোট শেষ হবে এপ্রিলের শেষে। করোনাকালে আট দফার ভোট করানোর যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনাই সার। সংক্রমণ, মৃত্যু ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে চলেছে অপরিমেয়।

তিন দিন আগে রাজ্যগুলোতে পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ নিশ্চিত এবং রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সোমবার নতুন করে সেই দাবি জানানোর পাশাপাশি তিনি আক্রমণ করেছেন মোদিকে। এক টুইটে রাহুল লেখেন, ‘৩৮৫ দিনেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জেতা যায়নি। উৎসব, তালি, থালা বাজানো অনেক হয়েছে। এবার টিকা দিন সবাইকে।’ টুইটের সঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় মোদির উদ্দেশে আরও রাহুল বলেন, ‘আপনি ঘণ্টা বাজাতে বলেছিলেন। থালা বাজাতে বলেছিলেন। মুঠোফোনে আলো জ্বালাতে বলেছিলেন। অথচ করোনা বেড়েই চলেছে। ইভেন্টবাজি বন্ধ করুন। যাঁদের প্রয়োজন সবাইকে টিকা দিন। রপ্তানি বন্ধ করুন এবং গরিব ভাইবোনদের আর্থিক সহায়তা করুন।’

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নতুনভাবে লকডাউন করা হবে কি না, আপাতত সেই বিতর্ক চলছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র আরও একবার পূর্ণ লকডাউনে যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আগামী বুধবারে নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে। সুপ্রিম কোর্টের ৫০ শতাংশ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আদালত চত্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতিরা আপাতত বাড়ি থেকে ভার্চ্যুয়ালি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লির দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সর্বত্র রেলস্টেশনে ভিড় বাড়াচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। লকডাউনের আগে ঘরে ফেরার তাগিদ।