যে কারণে বিদেশ সফরের ‘ঐতিহ্য’ ভাঙলেন সুগা

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা
ছবি: রয়টার্স

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য বড় কোনো দেশকে বেছে নেননি। তিনি সফর করলেন ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। দুই দেশে চার দিনের সফর ছিল তাঁর। আজ বুধবার সফর শেষ করে জাকার্তা থেকে টোকিওর উদ্দেশে যাত্রা করেন সুগা।

ঐতিহ্যগতভাবে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সাধারণত প্রথম বিদেশ সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ব্যতিক্রম হিসেবে বিগত বছরগুলোতে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে চীন ভ্রমণ করতেও দেখা গেছে। তবে এর বাইরের দেশ ভ্রমণ করার ঘটনা খুবই বিরল। অবশ্য এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষে বিদেশি অতিথিকে স্বাগত জানানো এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার নিয়েও  তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মাথায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর জোট আসিয়ানের দুটি দেশে যান সুগা। উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে সুগার আলোচনায় পরিষ্কার হয়েছে, দেশ দুটিকে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো চীনবিরোধী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত করাই ছিল তাঁর সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। দুই দেশের যেখানেই সুগা গেছেন, সেসব জায়গায় দেওয়া বক্তব্যে অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। প্রকাশ্যে সমালোচনা না করলেও তাঁর ‘কূটনৈতিক হামলার’ লক্ষ্য যে চীন ছিল, তা বুঝতেও সমস্যা হয়নি।

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। প্রায় দুই দশক ধরে চীন সেখানে ধীরে ধীরে সমুদ্র ভরাট করে সামরিক স্থাপনা গড়ছে। এ কাজ চীন করে চলেছে কখনো সেখানকার দেশগুলোর সম্মতিক্রমে, কখনো আবার অসম্মতিতে। এখন হঠাৎ করেই আওয়াজ উঠেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখার প্রচেষ্টা নিয়ে, যার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আসিয়ানের সমর্থন নিশ্চিত করতে জোটের এ দুই দেশকে সফরের জন্য বেছে নেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। ভিয়েতনামে তিনি সাফল্যের দেখা পেলেও ইন্দোনেশিয়া মনে হয় তাঁকে খুব বেশি সন্তুষ্ট করতে পারেনি। হ্যানয়ে দেওয়া বক্তব্যে সুগা ভিয়েতনামকে অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল গড়ে নেওয়ার ধারণা বাস্তবায়নে অপরিহার্য একটি উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভিয়েতনামের শক্তি বৃদ্ধি করতে জাপান দেশটির কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করবে।

অস্ত্র বিক্রির বাণিজ্যে জাপানের যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও কিন্তু এবার প্রথম শোনা গেল। বেশ কিছুদিন থেকে বলা হচ্ছিল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাতারে জাপান যুক্ত হবে। সুগার প্রথম বিদেশ সফর সেই নিশ্চয়তাই এখন দিচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াতেও জাপানের অস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গটি এসেছে। ইন্দোনেশিয়া অবশ্য জাপানের অস্ত্র নিয়ে উৎসাহ দেখালেও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর জোটে সক্রিয় অংশ নেওয়ার বিষয়ে দেশটির নেতৃত্ব তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সমুদ্র চলাচল স্বাধীনতার ধারণার প্রতি শর্তহীন সমর্থন ইন্দোনেশিয়া ব্যক্ত করলেও সুগার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, অঞ্চলজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে বহুপক্ষীয় একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

সেই বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তি যে আবশ্যকীয়, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট তা উল্লেখ না করলেও আভাস-ইঙ্গিতে তা তিনি ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছেন।

রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দেওয়া ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জাপানের অব্যাহত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি উপায় হিসেবে আরোপিত ভ্রমণ কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার বিষয়েও দুই পক্ষের মধ্যে ভিন্নভাবে আলোচনা হয়েছে।

তবে কীভাবে এবং কবে নাগাদ সাধারণ ভ্রমণকারীদের বেলায় তা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া উভয় দেশ থেকে বেশ বড় সংখ্যক নার্স ও সেবা প্রদানকারী জাপানে এসেছে। এখন অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে সেই কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া উভয় দেশই চাইছে দ্রুত জাপান যেন সব রকম নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে নেয়।

ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া সফরের মধ্য দিয়ে কূটনীতিতে নিজের প্রবেশের ঘোষণা দিলেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তবে বড় রকমের কোনো সাফল্যের আগাম ইঙ্গিত যে এর মধ্যে নেই, সফরের ফলাফল মনে হয় পরোক্ষভাবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে।