রোহিঙ্গা গণহত্যা: আইসিজের শুনানিতে অংশ নেবে জান্তাও

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিকল্প নেই ।
এএফপি ফাইল ছবি

আগামী সপ্তাহে হেগে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের মামলার শুনানিতে অংশ নেবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ, এর মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তি ছাড়াই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে যেতে পারে জান্তা সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলা করে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের আগস্টে জাতিগত নিধন শুরু হলে মিয়ানমারের এই সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের সাত লাখের বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে ওই মামলা করেছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মামলার প্রাথমিক শুনানির পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের জন্য অন্তব৴র্তীকালীন আদেশ জারি করে।

২০১৯ সালে আইসিজেতে ওই মামলায় প্রথম গণশুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দেশটির তখনকার স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। সে সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি। তবে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বন্দী সু চির একাধিক মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল এ শুনানিতে এখন সামরিক সরকারের প্রতিনিধিরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মিয়ানমারের সেনা সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান না থাকলেও জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা জান্তা প্রতিনিধিদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ক্রিডেনশিয়াল কমিটি গত ডিসেম্বরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিল। জান্তাকে শুনানিতে ডাকলেও ক্রিডেনশিয়াল কমিটি সু চির সরকারের আমলে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো তুনকে তাঁর পদে বহাল রেখেছে।

মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) বা জাতীয় ঐক্যের সরকারের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহের শুরুতে বলা হয়, কিয়াও মো তুন মিয়ানমারের পক্ষে আদালতের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য একমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তি।

মানবাধিকার আইনজীবী ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সাবেক সদস্য ক্রিস্টোফার সিডোটি বলেন, জান্তা মিয়ানমারের সরকার নয়।
বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকের প্রেসিডেন্ট তুন খিন বলেন, মিয়ানমারের জনগণ স্পষ্টভাবে জান্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

তুন খিন আরও বলেন, আইসিজেসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবাইকে এটা শুনতে হবে এবং জান্তাকে কোনো প্রকার বৈধতা দেওয়া চলবে না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার দাবি বাতিল করতে আহ্বান জানান সু চি। তিনি বলেছিলেন, আইসিজের এ বিষয়ে শুনানি নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তবে এ মাসের শুরুতে তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত মিয়ানমারের ঐক্যের সরকারের পক্ষ থেকে গণহত্যার অভিযোগ শোনার বিষয়ে আইসিজের এখতিয়ারকে মেনে নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায়

হেগের আদালতের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের জন্য নিবন্ধিত প্রতিনিধিরা হলেন জান্তা–নিযুক্ত দূত কো কো হ্লাইং এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন অ্যাটর্নি জেনারেল থিদা ওও। তিনি শুনানির জন্য আট সদস্যের আইনি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তবে মিয়ানমারের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতের শুনানিতে সু চির জায়গা নেবেন তাঁরা।

কোনো দেশের সরকার বিবদমান থাকলে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাকে স্বীকৃত দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি আইসিজে। এর নিয়মে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিদের সম্পর্কে যোগাযোগের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা দূতাবাস থেকে আসবে।

নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক শায়না বাউচনার বলেন, শুনানিতে জান্তার উপস্থিতি জাতিসংঘের সামনে সামরিক প্রতিনিধিত্বকে বৈধতা দেয় না।
বাউচনার আরও বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার ঘটনায় ন্যায়বিচারের ওপর আরও গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি দেওয়া উচিত।