লাশ মিলল কবির, মিলল না অনেক কিছুই

মিয়ানমারের কবি খেত থি

মিয়ানমারের কবি খেত থি। ৪৫ বছর বয়সী এই কবি তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘তারা মাথায় গুলি করতে পারে, কিন্তু তারা জানে না বিপ্লব হৃদয়ে থাকে।’

নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ কবিতা লিখেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই কবিতাই তাঁর জীবনকে থমকে দিয়েছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। তারপরও পরিবার ভেবেছিল হয়তো তাঁকে ফিরে পাবে। ফিরে পেয়েছে ঠিকই, তবে লাশ। আর সেই নির্জীব দেহের ভেতরের অনেক অঙ্গই ছিল না।

খেত থির স্ত্রী চাও সু বলেন, শনিবার তাঁদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ। সাগাইং অঞ্চলের শুয়েবো শহরে ছিল সেই কেন্দ্র।

সড়কপথে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগাইং অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর মনিওয়াতে থাকেন চাও সু। তিনি বিবিসি বার্মিজকে বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাঁকেও করা হয়েছিল। তারা বলেছিল, এ সেন্টারেই তাঁকে (খেত থি) রাখা হয়েছে। কিন্তু সে আর ফিরে এল না, এল তাঁর দেহ।’

চাও সু আরও বলেন, ‘তারা আমাকে সকালে ফোন করে মনিওয়াতে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো তাঁর হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বা অন্য কিছু...কিন্তু আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম, সে মর্গে আর তার শরীরের ভেতরের সব অঙ্গ বের করে নেওয়া হয়েছে।’

চাও সুকে হাসপাতালে বলা হয়েছিল, তাঁর স্বামীর হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুসনদ পড়ার আর তিনি প্রয়োজন মনে করেননি। কারণ, তিনি জানেন, সেখানে যা লেখা আছে, তা আদৌ সত্য নয়।

তবে রয়টার্স এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের কাছেও এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে কোনো জবাব আসেনি।

চাও সু বলেন, সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল খেত থিকে কবর দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তিনি স্বামীর লাশ ফেরত দিতে অনুরোধ করেন। তিনি জানেন না, কীভাবে তাঁর স্বামীর দেহের ভেতরের অঙ্গগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের নামে খেত থিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হিসাবে, এখন পর্যন্ত ৭৮০ জন নিহত হয়েছে। দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস একটি স্বাধীন অলাভজনক সংস্থা। মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দীদের যারা নির্বাসনে আছেন, তাঁরা এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন কবি নিহত হয়েছেন। খেত থির ৩৯ বছর বয়সী এক বন্ধু ক জা উই গত মার্চের শুরুর দিকে বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

খেত থি ছিলেন একজন প্রকৌশলী। কবিতা লিখবেন বলে ২০১২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আইসক্রিম ও কেক বানিয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাতেন।

সামরিক অভ্যুত্থানের দুই সপ্তাহ পর খেত থি লিখেছিলেন, ‘আমি কোনো নায়ক হতে চাই না। আমি শহীদও হতে চাই না। আমি দুর্বল চিত্তেরও হতে চাই না, আবার বোকাও হতে চাই না।’ তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আমি অন্যায়কেও সমর্থন করতে চাই না। আমি যদি এক মিনিটও বেঁচে থাকার সুযোগ পাই, সে সময়ে আমার বিবেককে পরিষ্কার রাখতে চাইব।’