শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলার মাঠে প্রাচীর দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ

শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলার মাঠে প্রাচীর নির্মাণকে ঘিরে আজ শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলার মাঠে প্রাচীর নির্মাণ ঘিরে আজ সোমবার শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয় একদল মানুষ এই পৌষ মেলার ঐতিহাসিক মাঠে প্রাচীর দেওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছিলেন না। শনিবার থেকে তাঁরা ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেজ খুলে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছিলেন। শনিবার থেকে প্রাচীর তোলা শুরু হলে এর বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলনে নামেন। রোববার শান্তিনিকেতনের ব্যবসায়ী সমিতি আন্দোলনে নেমে দাবি তোলে, শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলার মাঠে তারা প্রাচীর তুলতে দেবে না। এই দাবিতে মিছিল করে তারা।

আজ সোমবার সকালে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে ছুটে আসেন পৌষ মেলার মাঠে। সেখানে তাঁর উপস্থিতিতে পে-লোডার সহযোগে শুরু হয় প্রাচীর নির্মাণের কাজ। এ সময় এলাকাবাসী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে তাঁরা বিশ্বভারতীর অস্থায়ী দপ্তরের তালা ভেঙে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। বন্ধ করে দেন নির্মাণের কাজ। নষ্ট করেন নির্মাণসামগ্রী। ভেঙে ফেলেন বিশ্বভারতীর একটি ঐতিহাসিক গেটও। বিশ্বভারতী অভিযোগ করেছে, আন্দোলনকারীরা ঠিকাদার ও নির্মাণকর্মীদের মারধরও করেছেন।

এই ঘটনা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপালকে। রাজ্যপাল এ কথা বলেছেন এক টুইট বার্তায়।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অগেই ঘোষণা দিয়েছিল, এ বছর শান্তিনিকেতনে করোনার কারণে পৌষ মেলা হবে না। আর এই সিদ্ধান্তকে শান্তিনিকেতনের একদল ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজন মেনে নিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হলে তাঁদের মনে এই আশঙ্কা দানা বাঁধে, তবে কি শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলা বন্ধ হয়ে যাবে? যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এবার শান্তিনিকেতনে বসার কথা ছিল ১২৬তম পৌষ মেলা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীক্ষা দিবসকে স্মরণ করে প্রতিবছর বসে এই পৌষ মেলা। ১৩০১ বঙ্গাব্দের ১ পৌষ সূচনা হয়েছিল পৌষ মেলার। প্রথমে কাচ মন্দিরের সামনে এক দিনের জন্য বসত এই মেলা। এখন বসছে পূর্বপল্লির মাঠে। সেখানেই প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে আজ।