শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট বসছে আজ, পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা প্রধানমন্ত্রীর

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে
ফাইল ছবি: এএফপি

শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট অধিবেশন পুনরায় ডাকা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বসছে এই অধিবেশন। গত সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভ ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর এই অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে বলেছেন, দেশ একটি বিপজ্জনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। দেশে সরবরাহ করার মতো মাত্র এক দিনের পেট্রল মজুত আছে। খবর রয়টার্সের।

গতকাল সোমবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, দ্বীপরাষ্ট্রটিকে অপ্রীতিকর ও মারাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের মাত্র এক দিনের পেট্রল মজুত আছে। পরবর্তী দুই মাস হবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এখন সেটি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। আগামী কয়েক দিন দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ৭৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। আবশ্যকীয় ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। জ্বালানির অভাবে লোডশেডিং দৈনিক ১৫ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এই জ্বালানির প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।

রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, বিদেশি সহায়তা চাওয়া, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া এবং ট্রেজারি বিল ইস্যু তিন ট্রিলিয়ন রুপি থেকে চার ট্রিলিয়ন (১১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) রুপিতে উন্নীত করতে সংসদীয় অনুমোদন চাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, ‘এমনকি যে কঠিন সময় আমরা পার করে এসেছি, স্বল্প সময়ের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে জটিল হতে পারে।’

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ গত সপ্তাহে সহিংস হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাদের বাসাবাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও ৩০০ জন আহত হন।

একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের নির্দেশে ৯ মে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনেও চড়াও হন। সপরিবারে তিনি বাসভবনে আটকা পড়েন। পরদিন বিশেষ সেনা অভিযানে তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে একটি নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক রনিল বিক্রমাসিংহেকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এখন পর্যন্ত তাঁর মন্ত্রিসভায় চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই রাজাপক্ষের পোদুজানা পেরামুনা পার্টির সদস্য। তবে এখনো অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। বিরোধী দলগুলোকে সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছেন।

আরও পড়ুন

নতুন অর্থমন্ত্রীর কাজ হবে আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনায় বসা। সংস্থাটির সঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্গে তিনিও পদত্যাগ করেন।

করোনা মহামারির ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং।