সেদিন তড়িঘড়ি বেরিয়েছিলেন পাইলট

ক্যাপ্টেন আফওয়ান
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ইন্দোনেশিয়ায় বিধ্বস্ত শ্রীবিজয়া উড়োজাহাজের যাত্রীদের স্বজনেরা রয়েছেন অপেক্ষায়। উড়োজাহাজে থাকা ৬২ আরোহীর কোনো খোঁজ মেলেনি এখনো। উদ্ধারকারীরা বলছেন, সাগরে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কোনো যাত্রীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

উড়োজাহাজের যাত্রী কারা, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি কর্তৃপক্ষ। পরিবার ও বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিবিসি তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেছে। তুলে ধরেছে কয়েকজনের কথা।

সেদিন তড়িঘড়ি বেরিয়েছিলেন পাইলট ক্যাপ্টেন আফওয়ান

ফার্জা মাহারধিকার চাচা শ্রীবিজয়া এসজে১৮২ ফ্লাইটের পাইলট। ফার্জা জানেন না তাঁর পাইলট চাচার ভাগ্যে কী ঘটেছে। বললেন, ‘আমরা প্রচণ্ড শোকের মধ্যে রয়েছি। ভালো কিছুর জন্য প্রার্থনা করছি।’

ফার্জা জানান, দুর্ঘটনার দিন ক্যাপ্টেন আফওয়ান (৫৪) তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি খুব পরিপাটি থাকতেন। কিন্তু সেদিন তাঁর পোশাক ইস্তিরি করা ছিল না। আবার ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে তিন সন্তানের কাছে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে যান।

১৯৮৭ সালে পেশাগতভাবে পাইলটের দায়িত্ব পালনের আগে থেকেই বিমানবাহিনীতে কাজ শুরু করেন ক্যাপ্টেন আফওয়ান। তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। পরিবার ও সহকর্মীরা বলছেন, তিনি বেশ ধার্মিক ছিলেন। পশ্চিম জাভার বোগোর শহরের বাসিন্দা আফওয়ান প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের কাজে সহযোগিতা করতেন।

ফার্জা মাহারধিকা বলেন, চাচা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষকে সুপরামর্শ দিতেন। দানশীলতার জন্য তিনি প্রতিবেশীদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি চাচা ও তাঁর পরিবারের জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে আহ্বান জানান।

আনগা ফার্নান্দে আফরিয়ন এখনো বেঁচে আছেন, ভাবেন মা

২৯ বছরের আনগা এখনো বেঁচে আছেন বলে মনে করেন মা আফরিদা। পশ্চিম সুমাত্রার বাসিন্দা আফরিদা বলেন, ‘জাকার্তায় থাকা পরিবারের সদস্যরা আনগার খোঁজ করছেন। আমিও সেখানে যেতে চাই। কিন্তু মহামারির কারণে যাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

যাত্রার ঠিক আগের রাতে মাকে ফোন করেছিলেন আনগা।
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মাত্র এক সপ্তাহ আগে নাবিক আনগা প্রথম সন্তানের বাবা হয়েছেন। ছেলের নাম রেখেছেন আলভানো ফায়েজা আলিনগা। মা জানালেন, বাবা হওয়ার পর আরও পরিশ্রমী হন আনগা। সন্তানের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন তিনি। যাত্রার ঠিক আগের রাতে মাকে ফোন করেছিলেন আনগা। কার্গো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পনতিয়ানাক যেতে হবে বলে মাকে জানিয়েছিলেন। আনগাকে প্রায়ই ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জগুলোয় আসা-যাওয়া করতে হতো। নৌকায় যাতায়াতই পছন্দ ছিল তাঁর। কমই উড়োজাহাজে যেতেন। মা শান্তভাবে বললেন, যদি ছেলে মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসবেন। ঠিকভাবে দাফন করবেন। সে সময় তাঁর হাতে আনগার ছবিটি ধরা ছিল।

বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন নবদম্পতি ইহসান ও পুত্রি

উড়োজাহাজে ছিলেন নবদম্পতি ইহসান আদহালান হাকিম ও পুত্রি ওয়াহিয়ুনি। ইহসানের ছোট ভাই আরউইন আমরু হাকিম কম্পাস ওয়েবসাইটকে জানান, সোয়েকারনো হাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁর ভাইকে ফোন করে ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ার কথা জানানো হয়েছিল। পনতিয়ানাকে বিয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওই দম্পতি যাচ্ছিলেন।

পরিবারকে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন ইসদাহ

শ্রীবিজয়ার ওই ফ্লাইটে ইয়ুসরিলানিতার মেয়ে ইনদাহ হালিমা পুত্রি, জামাই মোহাম্মদ রিজকি ওয়াহিউদি ও তাঁদের সন্তান ছিলেন। সেই ফ্লাইট বিধ্বস্তের খবরে জ্ঞান হারান তিনি। ইনদাহ জাভায় বাবার কাছে এসেছিলেন। সেখানেই সন্তানের জন্ম হয় তাঁর। পরে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে যাচ্ছিলেন পনতিয়ানাকে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ফ্লাইট উড়ানের আগে ইনদাহ হোয়াটসঅ্যাপে উড়োজাহাজের পাখাসহ একটি ছবি পাঠান পরিবারকে। ভারী বৃষ্টির কারণে তিনি পরিবারকে প্রার্থনা করতে বলেন।

উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা পনতিয়ানাকের সুপাদিও বিমানবন্দরে বিশেষ কেন্দ্র খুলেছেন। সেখানে শনাক্তের সুবিধার জন্য উড়োজাহাজে থাকা যাত্রীদের স্বজনের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হচ্ছে।

ফার্জা জানান, দুর্ঘটনার দিন ক্যাপ্টেন আফওয়ান (৫৪) তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি খুব পরিপাটি থাকতেন। কিন্তু সেদিন তাঁর পোশাক ইস্তিরি করা ছিল না। আবার ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে তিন সন্তানের কাছে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে যান।

পুলিশের সহকারী জ্যেষ্ঠ কমিশনার ইয়ানি পারমানা বলেন, স্বজনদের নমুনা সংগ্রহের জন্য ৫১ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কমপক্ষে আরও দুদিন সময় লাগবে। স্বজনদের থেকে নেওয়া নমুনা মিলিয়ে পরিবারের অন্যদের শনাক্ত করা হবে।