স্কুল বন্ধ, ঘরে বসে কাজ করার আহ্বান কর্মচারীদের

পেট্রল স্টেশনের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের টোকেন দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা। কলম্বো, শ্রীলঙ্কা ২৭ জুন
ছবি: রয়টার্স

সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কায় চলছে ব্যাপক জ্বালানিসংকট। পেট্রলের জন্য পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের টোকেন দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা। এদিকে কলম্বোয় স্কুল বন্ধ রয়েছে।

ঘরে বসে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের। খবর রয়টার্সের
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকার রেকর্ড হওয়ায় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেই জ্বালানির সমবণ্টন নিশ্চিত করতে টোকেন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। স্কুল বন্ধ ও ঘরে বসে কাজ করে জ্বালানি সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে সরকার।

অটোরিকশা চালান ডব্লিউ ডি শেলটন। তাঁর বয়স ৬৭ বছর। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পেট্রলপাম্পের লাইনে দাঁড়ানোর একটি টোকেন পেয়েছেন তিনি। পেট্রল এলে অন্যদের মতো তিনিও পেট্রল পাবেন। শেলটন বললেন, ‘আমি চার দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই চার দিন আমি পর্যাপ্ত ঘুম, এমনকি পর্যাপ্ত খেতেও পারিনি।’

শেলটন রাজধানী কলম্বোয় যে পেট্রলপাম্পের লাইনে দাঁড়িয়েছেন, সেই লাইনটিতে তাঁর অবস্থান ২৪তম। পেট্রল এলে আগে ২৩ জন পাবেন। তারপরে তিনি পাবেন। পেট্রলপাম্প থেকে বাড়ির দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার হলেও, যেতে না পারা শেলটন বলেন, ‘উপার্জন না থাকায় পরিবারের জন্য খাবারও কিনতে পারছি না।’

শ্রীলঙ্কায় এখন প্রায় ৯ হাজার টন ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রলের মজুত রয়েছে। এ তথ্য দেন শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকারা। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আপাতত জ্বালানির কোনো চালান আসার কথা নেই। মজুত জ্বালানি দিয়ে কত দিন চলা যাবে, তা সরকার জানে না।

এদিকে জ্বালানি সাশ্রয়ের চেষ্টায় সরকারি কর্মচারীদের ঘরে বসে অফিসের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কত দিন এভাবে ঘরে বসে কাজ করতে হবে, তা বলা হয়নি। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে কলম্বো ও আশপাশের এলাকাগুলোতে স্কুল বন্ধ। গত সপ্তাহ থেকে জ্বালানি স্টেশনের লাইনে মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
চরম দুর্দশাকে চরম দুঃখের বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন অটোরিকশাচালক শেলটন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ট্র্যাজেডি। আমরা জানি না এর শেষ কোথায়।’

জ্বালানি বণ্টনের ক্ষেত্রে গণপরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও স্বাস্থ্যসেবার মতো অতি জরুরি খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু জ্বালানি বন্দর আর বিমানবন্দরের জন্য বরাদ্দ থাকছে। ফলে অনেকে জ্বালানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও জ্বালানি পাচ্ছেন না। কেউ কয়েক দিন লাইনে থাকার পর অল্প জ্বালানি পাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বহুজাতিক দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। সংকট থেকে উদ্ধারে তহবিল নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল এখন শ্রীলঙ্কায়। ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকার।
আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্মী-পর্যায়ের একটি চুক্তিতে পৌঁছার আশা শ্রীলঙ্কান সরকারের। কিন্তু তা হলেও অতিদ্রুত তহবিল মিলবে, এমন সম্ভাবনাও কম।