ঘুমের মধ্যে নতুন ভাষা শেখা কি সম্ভব

বিদেশি ভাষা শেখার শখ বা প্রয়োজনীয়তা অনেকেরই আছে। কিন্তু সেই পথে নানা বাধা উৎসাহে পানি ঢেলে দিতে পারে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় মানুষের শেখার ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন।

রাতে ঘুমের সময়ে মস্তিষ্ক অত্যন্ত সীমিতভাবে বাইরের স্টিমুলেশনে প্রতিক্রিয়া দেখায় বলে এত দিন গবেষকদের ধারণা ছিল। অর্থাৎ তাঁদের মতে, মস্তিষ্ক বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।

কিন্তু সুইজারল্যান্ডে নতুন এক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, গভীর ঘুমের সময়েও মানুষ নতুন তথ্য গ্রহণ করতে পারে। লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ডোরোটে সাউর বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণার আওতায় সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীদের ঘুমের মধ্যে একজোড়া করে শব্দ শোনানো হয়েছিল। যেমন জার্মান শব্দ “বাড়ি”, সঙ্গে কাল্পনিক শব্দ “টোফার” অথবা “কর্ক”-এর কাল্পনিক জোড় শব্দ “আরিল”। সে সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গও মাপা হচ্ছিল। ঘুম ভাঙার পর তাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, “টোফার” বা “আরিল” কি জুতা রাখার জায়গায় খাপ খায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক জবাব পাওয়া গিয়েছিল।’

তবে এর অর্থ এই নয় যে ঘুমের মধ্যে শেখা শব্দ সরাসরি প্রয়োগ করা যায়। ডোরোটে সাউর বলেন, ‘জেগে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্ক অনেক ভালোভাবে নতুন তথ্য জমা করতে পারে। এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে খুব কম দৈর্ঘ্যের পর্যায়ে মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট কিছু কার্যকলাপ বুঝতে পারে, যা অনেকটা জেগে থাকার সময়ের মতো। ক্ষণিকের সেই মুহূর্তে নতুন তথ্য জমা রাখা সম্ভব। জেগে থাকার সময় সেটা অনেক বেশি কার্যকর।’

কয়েকটি সহজ কৌশলের মাধ্যমে জেগে থাকার সময়ে আরও কার্যকরভাবে শেখা সম্ভব। জার্মানির এয়ারফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানী পেট্রা কিয়র্শহফ মনে করেন, সঠিক ডোজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যেমন আমরা জানি, “ডিস্ট্রিবিউটেড লার্নিং” বিশেষভাবে কার্যকর হয়। অর্থাৎ এক ঘণ্টার মধ্যে শব্দ তালিকার মতো কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগ না দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ভাগে ভাগে শেখার চেষ্টা করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।’

তবে কৌশল নিয়ে যতই পরীক্ষা–নিরীক্ষা হোক না কেন, প্রায়ই মনে হয় কোনো মানুষ যেন সত্যি ঘুমের মধ্যে বিদেশি ভাষা শিখেছে। অন্যদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হিমশিম খেতে হয়েছে। তাহলে কি ভাষা শেখার প্রতিভা বলে কিছু আছে। পেট্রা কিয়র্শহফ বলেন, ‘ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল সত্যি আছে। কেউ বিদেশি ভাষার ধ্বনিগুলোর মধ্যে ভালো করে পার্থক্য করতে পারলে, ভালো মুখস্থ করতে পারলে, কোনো বাক্য শুনে ব্যাকরণের নিয়ম বুঝতে পারলে সেই দক্ষতা বোঝা যায়। তবে ভাষা শেখার সেই প্রতিভা সার্বিক সাফল্যের মাত্র ২০ শতাংশের ওপর প্রভাব ফেলে।’

মোটিভেশন বা প্রেরণা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পরিশ্রম করলে বিশেষ প্রতিভা না থাকলেও উচ্চ মাত্রায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তবে সারা দিন পড়াশোনা করে কেউ বইপত্র সরিয়ে রাখলে বিবেক দংশনের কোনো কারণ নেই। কারণ, ঘুমানো সত্যি ভালো! একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সদ্য শেখা জ্ঞান ঘুমের মাধ্যমে আরও স্থায়ী হয়।