বার্লিনে বিশ্বসংস্কৃতির শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন বাংলাদেশিরা
জার্মানির বার্লিনের রাস্তায় বর্ণবাদ ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিশ্বসংস্কৃতির শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববারের এ অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ অংশ নেন। ‘কার্নিভ্যাল ডের কুলটুর’ নামে পরিচিত এই সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। এই পথজুড়ে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ বর্ণবাদবিরোধী ঐক্যের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করেন।
জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে বর্ণবাদী ও জাতীয়তাবাদী দলের উত্থানের পটভূমিতে এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বার্লিনে ১৯৯৬ সাল থেকে এ ধরনের বর্ণবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রার ধারাবাহিকতা চলছে। এ বছরও নানা সম্প্রদায়ের মানুষ ও শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের, যেমন ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং এশিয়ার সাংস্কৃতিক দলগুলো এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। সেই শোভাযাত্রায় তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলে। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে এই শোভাযাত্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেশীয় সংস্কৃতির প্রদর্শনী করে আসছেন।
বার্লিনের বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক ফোরাম বা ‘বেঙ্গলিশে কুলটুর ফোরুম’–এর উদ্যোগে বিশ্বসংস্কৃতির এ শোভাযাত্রার সঙ্গী হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতিবছর বাংলার ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সংগীতের মাধ্যমে তাঁরা এই শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তোলে। হাজার হাজার দর্শক রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের অভিনন্দন জানান।
অংশগ্রহণকারী নারীরা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি পরেছিলেন। কপালে টিপ, খোঁপায় রঙিন ফুল আর দেশীয় অলংকারে সেজেছিলেন তাঁরা। ছেলেরা লুঙ্গি-ফতুয়া পরিধান করে মাথায় গামছা বেঁধে জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও লোকগানের সঙ্গে নেচে–গেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশের লক্ষাধিক মানুষ করতালি আর চিৎকারে তাঁদের অভিবাদন জানিয়েছে।
জার্মানিতে এত বিশাল মানুষের উপস্থিতিতে এ ধরনের আয়োজন বিরল। এই আন্তসাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা দেখতে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ৬৮টি সাংস্কৃতিক দল ও প্রায় চার হাজার শিল্পী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে থেমে থেমে বিভিন্ন সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেছেন। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা নিয়ে আবারও বার্লিনের রাজপথ জয় করলেন। সেই রাজপথে ছিল বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি।
অন্যদিকে এ আয়োজনে শিশুদের জন্য আলাদা একটি কার্নিভ্যালও ছিল। সেখানে শিশুদের নিয়ে ‘বাংলার উঠান’ নামের একটি সংগঠন বাংলা গানের ছন্দে অংশগ্রহণ করে।
এই বিশাল আয়োজনে বার্লিন শহর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল। কার্নিভ্যাল এলাকা ঘিরে ১ হাজার ৫০০ পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।