জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চাই রাষ্ট্রের জবাবদিহি

১৯ ডিসেম্বর শেষ দিনে ২০টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে অধিকারকর্মীদের বিক্ষোভ। সম্প্রতি কানাডার মন্ট্রিয়লে
রয়টার্স

কানাডার মন্ট্রিয়লে হিমাঙ্কের নিচে কনকনে শীতের মধ্যে চলছে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য শীর্ষ সম্মেলন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলছে দর-কষাকষি। ‘জীবন্ত বিশ্বের ভাগ্য’ নিয়ে ১৯৩টি দেশ প্যালে ডে কংগ্রেসের প্লেনারি হল, পাশের কক্ষ আর করিডরে তুমুল বিতর্ক করছে। বরাবরের মতো আলোচনার শেষ ঘণ্টায় লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন হতে পারে। ১৯ ডিসেম্বর শেষ দিনে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ২০টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো চূড়ান্ত হবে।

মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি সময় পর ৬ ডিসেম্বরে দুই সপ্তাহব্যাপী কপ-১৫ উদ্বোধন হয়। ‘প্রতিবেশগত সভ্যতা: পৃথিবীর সব জীবনের জন্য একটি সম্মিলিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০২১ সালে চীনের কুনমিং শহরে কপ-১৫ শুরু হয়েছিল। চীনের শূন্য-কোভিড নীতির কারণে চলতি বছরের শুরুতে কুনমিং থেকে মন্ট্রিয়লে সম্মেলন স্থানান্তর করা হয়।

বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামোর মূল লক্ষ্য, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমিয়ে আনা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালে ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস এবং ২০৫০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার।

খসড়া বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামোতে ৩০ শতাংশ ভূমি ও সমুদ্র রক্ষা, ক্ষতিকর ভর্তুকি হ্রাস এবং আক্রমণাত্মক প্রজাতির মোকাবিলা মূল লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক যুগ আগে জাপানে অনুষ্ঠিত এ ধরনের সর্বশেষ বৈঠকে ২০১০ দশকের জন্য ‘আইচি লক্ষ্যমাত্রা’ গৃহীত হয়েছিল।

দু–এক দিনের মধ্যে শতাধিক দেশের পরিবেশমন্ত্রীরা সম্মেলনে যোগ দেবেন। মূল লক্ষ্যমাত্রাসহ অনেক বিষয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। কপ–১৫ খুব সামান্য রাজনৈতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করত। এখন জনচাপ তৈরির কারণেই রাজনৈতিক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।

সংরক্ষণপদ্ধতি ব্রাকেটবন্দী

এখনো আলোচনার প্রধান বিষয়গুলো ব্রাকেটবন্দী হয়ে আটকে আছে। ২০টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূমি ও মহাসাগর রক্ষার ৩০x৩০ (সংরক্ষিত বনাঞ্চল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়) লক্ষ্যমাত্রা পাদপ্রদীপের আলোয় আছে। তবে আশঙ্কা আছে, মন্ত্রী ও কূটনীতিকেরা সংকটের অর্থনৈতিক কারণগুলোর দিকে নজর দেবেন না এবং পুঁজিবাদীদের প্রকৃতি লুণ্ঠন চলবেই।

গত ৫০ বছরে ভূমি ও সমুদ্র ব্যবহারের অভূতপূর্ব পরিবর্তনকে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে ভূমিভিত্তিক পরিবেশের তিন-চতুর্থাংশ এবং সামুদ্রিক পরিবেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় বসতির প্রায় অর্ধেক ভূমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। রূপান্তরিত এলাকায় জাতীয় গড় থেকে ৭০ শতাংশ কম ফলন হচ্ছে। ফলন বাড়াতে প্রচুর জীববৈচিত্র্য নষ্ট করা হচ্ছে।

শতাধিক দেশ এই দশকের শেষ নাগাদ অন্তত ৩০ শতাংশ ভূমি ও মহাসাগর সংরক্ষণের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। কিন্তু প্রান্তিক জেলে ও আদিবাসীরা বলছেন, তাঁরা সাগর বা বনভূমির ক্ষতি করেননি। অথচ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের শাস্তি দেওয়ার নামান্তর। সমুদ্রে অবাধ দায়বিহীন বাণিজ্যিক নৌযান চলছে।

জেলেরা বলছেন, এ ধরনের প্রস্তাব উপকূলীয় সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। জেলেরা বাণিজ্যিক মাছ ব্যবসায়ীদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি লোক নিয়োগ করেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডে পরিবেশগত ক্ষতি কম। তাঁরা অনেক কম জ্বালানি ব্যবহার এবং কার্বন নির্গমন করেন।

বনভূমি সংরক্ষণ নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। এলাকাভিত্তিক সংরক্ষণপদ্ধতিতে হাজার হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিক স্থানের তত্ত্বাবধায়ক ব্যক্তিদের সুরক্ষিত এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আদিবাসী মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে।

মন্ট্রিয়লে আদিবাসী গ্রুপগুলো বলছে, আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ভূমির রক্ষক হিসেবে দেখা হয়। এটি বিজ্ঞানও সমর্থন করে। আদিবাসীরা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ; কিন্তু তাঁরা জীববৈচিত্র্যের ৮০ শতাংশ রক্ষা করে।

আরেকটি বিতর্কের বিষয় হলো প্রতিটি দেশকে ৩০x৩০ রক্ষা করতে হবে, নাকি এটি একটি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা। যদি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা হয়, তাহলে কম জীববৈচিত্র্যসম্পন্ন ধনী দেশগুলোকে প্রকৃতিকে ধ্বংস না করতে দরিদ্র অথচ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থসহায়তা দেওয়া উচিত। জীববৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলো আন্তর্জাতিক সম্পদও বটে।

তবে উন্নত দেশগুলোর কথা ও কাজে মিল নেই। উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডে সরকার দাবি করেছে, তাদের প্রায় ২৮ শতাংশ সংরক্ষিত ভূমি আছে। একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বাস্তবে এটি মাত্র ৩ শতাংশ।

সাগর, সমুদ্রতল ও সমুদ্র উপকূল বেসরকারীকরণের বৃহত্তম এলাকা হয়ে উঠেছে। ১৯৮২ সালে সমুদ্র আইনসংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশন উপকূলীয় দেশগুলোকে তাদের উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে মঞ্জুর করে। এতে বিশ্বের সমুদ্র এলাকার এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রীয় সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। এতে দূরবর্তী দ্বীপ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো সবচেয়ে লাভবান হয়েছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি ১১ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা পেয়েছে। যুক্তরাজ্য পেয়েছে ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা যা তার স্থলভাগের ২৭ গুণ বেশি।

সমুদ্রসম্পদকে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। তারা সমুদ্রে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে বা বিক্রি করেছে। এটি সমুদ্রের পরিবেশকে ধ্বংস করেছে, মাছের জনসংখ্যা কমিয়েছে। সমুদ্রে পয়োনিষ্কাশন, রাসায়নিক ও প্লাস্টিক পাম্প করছে। খনিজ সম্পদ আহরণ ও পর্যটন জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ এবং অন্যান্য উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করছে। মন্ট্রিয়লে এদের অনেক লবিস্টের আনাগোনা বেড়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র খননের ওপর স্থগিতাদেশকেও সমর্থন করা উচিত। শত শত বিজ্ঞানী এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহদাকার মেশিন সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, লিথিয়াম এবং অন্যান্য খনিজের পাশাপাশি রেয়ার আর্থ অনুসন্ধান করে। রেয়ার আর্থ ইলেকট্রনিক ডিভাইস, বৈদ্যুতিক যান ও বায়ু টারবাইন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। অনুসন্ধানকালে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, প্রবাল প্রাচীরসহ অন্যান্য জীবকে ধ্বংস করতে পারে। খনন সাগরের কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত করে।

মাইলস্টোনবিহীন ক্ষতিকর ভর্তুকি লক্ষ্যমাত্রা

প্রতিবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণী ধ্বংস এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ভর্তুকি দেওয়া করে। যেমন গরুর মাংসের জন্য আমাজন পরিষ্কার করার লক্ষ্যে কর অব্যাহতি বা মধ্যপ্রাচ্যে ভূগর্ভস্থ জল আহরণের জন্য আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সরকারগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। কখনো কখনো উপযুক্ত কারণও থাকে। যেমন দারিদ্র্য বিমোচন।

অনেক দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে চায়। কিছু দেশ এর বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, ভর্তুকি শনাক্ত করা বেশ কঠিন।

মৎস্য শিল্প খাতে দেওয়া ভর্তুকি বাতিল করতে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ, ২২ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি অতিরিক্ত ও অবৈধ মাছ ধরা, বিধ্বংসী মাছের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংসে ব্যয় হয়। সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানেও ভর্তুকি বন্ধ করা উচিত। এগুলো সরাসরি দূষণের পাশাপাশি জলবায়ুসংকটও তৈরি করে।

দূষণের বিষয়ে কম পদক্ষেপ

প্রতিটি শ্বাসে নাইট্রোজেন ৭৮ শতাংশ। এটি কোনো ক্ষতি করে না। স্থিতিশীল ও আকাশকে নীল করে তোলে। অন্যান্য নাইট্রোজেন যৌগ তথা অ্যামোনিয়া, নাইট্রেটস, নাইট্রাস অক্সাইড বায়ু ও পানিকে দূষিত করে। মানুষের ব্যবহৃত প্রায় ৮০ শতাংশ নাইট্রোজেন খাদ্য উৎপাদন, পরিবহন, জ্বালানি, শিল্প ও বর্জ্যজল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নষ্ট হয় এবং দূষণ হিসেবে পরিবেশে প্রবেশ করে। বড় বড় সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে, চাষ থেকে জলপ্রবাহে নাইট্রোজেনের প্রবাহ।

সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ ১৯৮০ সাল থেকে বর্তমানে দশ গুণ বেড়েছে। বায়ু, পানি ও মাটিদূষণ সবই বাড়ছে। এর ফলে দূষণকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির চতুর্থ বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

শব্দদূষণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি স্বীকৃত হুমকি। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর বংশবৃদ্ধির ধরন ও অভিবাসন পথকে ব্যাহত করছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে প্রতি দশকে সমুদ্রে শব্দের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। এর প্রধান উৎস জাহাজ ও এয়ারগান। এয়ারগান সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সিসমিক ম্যাপিংয়ে ব্যবহৃত হয়। জাহাজের ইঞ্জিনে নিষেধাজ্ঞাসহ সমুদ্রের শব্দ কমাতে সরকারকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত।

আক্রমণাত্মক প্রজাতি নির্মূলে বিতর্কিত বিকল্প

পৃথিবীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী আক্রমণাত্মক হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বন্য শূকর এবং ভূমধ্যসাগরে সিংহ মাছের ধ্বংসযজ্ঞ। এতে দ্বীপগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন প্রকাশ করা হবে।

কিছু সংরক্ষণবাদী আক্রমণাত্মক প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিতর্কিত প্রস্তাব করেছেন। জিন ড্রাইভ অ্যাপ্লিকেশনটি ম্যালেরিয়া নির্মূলে ব্যবহৃত হয়। জিন ড্রাইভ আক্রমণাত্মক প্রজাতির জেনেটিক কোড প্রবর্তন করে অনুর্বর করে তুলবে অথবা সমলিঙ্গ বিশিষ্ট প্রজন্ম তৈরি করবে। পদ্ধতিটি শুধু পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়েছে। স্পষ্টই ঝুঁকি আছে। জেনেটিক পদ্ধতির কোনোটিই সার্বিক সমাধান নয়।

জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য: উভয়ের সমাধান বা কোনোটিরই না

আজতক আবাস ধ্বংস ও সম্পদ আহরণ জলবায়ু সংকটের চেয়ে জীববৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে। জলবায়ু সংকট বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করার কারণে ভবিষ্যতে এই প্রবণতায় পরিবর্তন হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য সংকটের মধ্যে আন্তসম্পর্ক গভীর। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন নয়।

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি জলবায়ুসংকটকে আরও গভীর করছে। সংযুক্ত, বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে। কোম্পানিগুলোকে জলাভূমি ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উচ্চ জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না। এমনকি সেখানে ছোট জীববৈচিত্র্য থাকলেও কোনো ক্ষতি করতে দেওয়া যাবে না।

মেগাডাইভার্স দেশগুলো বলেছে, ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা লাগবে। কপ-২৭–এ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বছরের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট তহবিলের মাত্র ৭ শতাংশ আদিবাসীদের সংস্থাগুলো পেয়েছে।

জবাবদিহিব্যবস্থা

অতীতের জীববৈচিত্র্যের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কার্যকর বাস্তবায়নের নিরিখে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জবাবদিহিব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রথমত, অবশ্যই পরিমাপযোগ্য সংখ্যাসূচক লক্ষ্যমাত্রা থাকতে হবে। সমাজের সব অংশীজন জানে, কত শতাংশ জমি পুনরুদ্ধার করা হবে অথবা কী পরিমাণ দূষণ সরকার হ্রাস করবে। পরিবীক্ষণের জন্য অবশ্যই লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মাইলফলক থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জীবন ও বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে রাষ্ট্রের উপলব্ধি এখনো ত্রুটিপূর্ণ। উপাত্তেও বড় ফাঁকফোকর রয়েছে। অবশ্যই উপাত্তের মান উন্নত করতে হবে।
সব শেষে একটি যথাযথ জবাবদিহিব্যবস্থা প্রয়োজন। বিশ্বনেতারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চান, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
চেয়ারম্যান, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়