বৈঠক থেকে কী চান বাইডেন ও সি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বসবেন। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের নেতা গত সপ্তাহে জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে যৌথ ঘোষণা দেন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে তাঁদের এই যৌথ ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। তাইওয়ানে সামরিক মহড়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। আজ বাইডেন ও সির বৈঠকে অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় সি ও বাইডেনের চাওয়া–পাওয়া নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
বৈঠকের একটি সূত্র মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বাইডেন ও সির আলোচনার টেবিলে গুরুত্ব পাবে সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যু। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, দুই নেতা নিজেদের অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করবেন। গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন ও সির মধ্যে দুই দফা আলোচনা হয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে কোনো উন্নতি হয়নি।
গত সপ্তাহে ন্যাশনাল কমিটি অন ইউএস-চীন রিলেশনসকে সি চিন পিং জানান, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। সি বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতাই একমাত্র পথ।
কী চান বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈঠক নিয়ে প্রত্যাশা কম থাকলেও বৈঠক যে হচ্ছে, সেটিই বড় কথা। দুই পক্ষই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন চায়। কয়েক বছর ধরে এই সম্পর্কের কোনো উন্নয়ন হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে সবচেয়ে বড় অ্যাজেন্ডা হবে তাইওয়ান। বাইডেন চান, সি তাইওয়ানে শান্তি বজায় রাখুন। বেইজিং তাইওয়ানে সামরিক অবস্থান জোরদার করছে। এর বদলে বাইডেনকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তিনি তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব খর্বের চেষ্টা করবেন না।
বাইডেন-সি বন্ধু না শত্রু?
এই বৈঠক সিকে প্রভাবিত করতে বাইডেনের জন্য একটি সুযোগ। চীন ইস্যুতে বাইডেনের মতাদর্শকে তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে—প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক।
গত সেপ্টেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, মরূদ্যানের চারপাশে যদি মরুভূমি থাকে, তাহলে মরূদ্যানও মরুভূমি হয়ে যেতে পারে।
কী চান সি
বাইডেনের সঙ্গে জুমে আলোচনা হবে সির। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের এই আলোচনার মূল ইস্যু হবে তাইওয়ান। এশিয়ার বাইরে অনেক দেশই তাইওয়ানের আলাদা অস্তিত্ব মেনে নিতে নারাজ। কারণ, তাইওয়ানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রয়েছে। তবে বেইজিং চায় তাইওয়ান চীনের সঙ্গেই থাকুক।
কয়েক সপ্তাহ আগে জো বাইডেন চীনে হামলা করলে তাইওয়ানকে সমর্থন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ব্যাখ্যা চান সি।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু ছাড়াও দ্বন্দ্বের আরেকটি কারণ করোনাভাইরাসের উৎস। ভাইরাসটির উৎস নিয়ে চীন লুকোচুরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গত সপ্তাহে বাইডেন চীনের টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যে আবার বিধিনিষেধ আরোপ করতে চেয়েছিলেন। বাইডেন এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জোট পুনর্গঠনও শুরু করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে বাইডেন ও সির যখন ফোনালাপ হয়, তখন বেইজিং বলেছিল, প্রতিযোগিতা যেন কোনোভাবেই শত্রুতায় রূপ না নেয়।
দুই দেশের মধ্যকার এই বৈরিতার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে হতে পারে, সেটিই এখন আলোচ্য বিষয়।