ট্রাম্পের সঙ্গে সির বৈঠকের আগে কেন দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করছে চীন

চীনের একটি দুর্লভ খনিজ ধাতুর খনিতে কাজ করছেন এক শ্রমিকফাইল ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠক সামনে রেখে চীন আবারও দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে দুই নেতার মধ্যে ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্বের প্রক্রিয়াজাত দুর্লভ খনিজ ধাতু এবং খনিজ চুম্বকের ৯০ শতাংশের বেশি চীনে পাওয়া যায়। দেশটি এ ধরনের উপকরণ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে এর সরবরাহ সীমাবদ্ধ করেছে।

চীনের একটি দুর্লভ খনিজ ধাতুর খনি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইলেকট্রিক গাড়ি থেকে শুরু করে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এবং সামরিক রাডার পর্যন্ত নানা যন্ত্রে ১৭ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ খনিজ ধাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

দুর্লভ খনিজ উপকরণ রপ্তানির ওপর চীন নতুন যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

চীন কী ঘোষণা দিয়েছে

চীন আগে থেকেই দুর্লভ খনিজের রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছিল। গত বৃহস্পতিবার তারা আরও পাঁচটি নতুন উপকরণকে এই তালিকায় যুক্ত করেছে। এতে এখন মোট ১২টি দুর্লভ খনিজ উপকরণ রপ্তানির সীমাবদ্ধতার আওতায় পড়েছে।

এ ছাড়া দেশটি এমন অনেক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেগুলো দুর্লভ খনিজ আহরণ ও পরিশোধনের কাজে লাগে। দুর্লভ খনিজ আহরণ ও পরিশোধন—দুই ক্ষেত্রেই চীনের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষে।

চীন আগে থেকেই দুর্লভ খনিজের রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছিল। গত বৃহস্পতিবার তারা আরও পাঁচটি নতুন উপকরণকে এই তালিকায় যুক্ত করেছে। এতে এখন মোট ১২টি দুর্লভ খনিজ উপকরণ রপ্তানির সীমাবদ্ধতার আওতায় পড়েছে।

নতুন বিধিনিষেধের আওতায় রপ্তানিকারকদের এখন থেকে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে। এর আগে গত এপ্রিলে একই ধরনের নিয়ন্ত্রণ জারির কারণে বিশ্বে দুর্লভ খনিজ চুম্বকের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এতে বিশ্বের অনেক গাড়ি কারখানাকে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

এখন একই পরিস্থিতি দেখা দেয় কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে চীন বলছে, লাইসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়াটি সহজ করা হবে। তবে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য রপ্তানির আবেদন করা হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ও সুনির্দিষ্ট ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবেদনগুলো খুবই সতর্কভাবে যাচাই করা হবে।

বিদেশি উৎপাদনকারী বলতে কী বোঝানো হচ্ছে

চীন প্রথমবারের মতো বলেছে, তারা বিদেশি উৎপাদনকারীদের বিধিনিষেধের আওতায় আনছে। চীনা উপকরণ বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ধরনের দুর্লভ খনিজ পণ্য তৈরি করে—এমন বিদেশি উৎপাদনকারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

১৯৫০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের নিয়ম চালু আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা বিদেশি সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোকে চীনে চিপ বিক্রি করতে বাধা দিয়েছে, যদিও ওই চিপগুলো মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের কোনো দুর্লভ খনিজ পণ্যের উৎপাদনকারী যদি তাদের পণ্যে চীনের দুর্লভ খনিজ উপকরণ ব্যবহার করে, তবে সে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের এখন থেকে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হবে। আর চীনা উপকরণ ব্যবহার করে ‘দুর্লভ খনিজ চুম্বক’ প্রস্তুতকারীদেরও একই প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।

মূলত চীনের ‘দুর্লভ খনিজ’ সরবরাহ শৃঙ্খলে আধিপত্য বজায় রাখার কথা মাথায় রেখে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্য দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে চীনের পণ্যের বিকল্প তৈরি করতে না দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যেকোনো বিদেশি উৎপাদনকারীর ওপরই কি এ নিয়ম কার্যকর হবে

না। চীন শুধু নির্দিষ্ট কিছু দুর্লভ খনিজ উপকরণ ও সংশ্লিষ্ট চুম্বক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে।

যেমন জার্মানিতে তৈরি একটি ওয়াশিং মেশিনে চীনের ‘দুর্লভ খনিজ চুম্বক’ থাকলেও তা অন্য ইউরোপীয় দেশে বিক্রি করতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

কিন্তু যদি কোনো জার্মান প্রতিষ্ঠান চীনা ‘দুর্লভ খনিজ’ উপকরণ ব্যবহার করে দুর্লভ খনিজ চুম্বক তৈরি করে, তবে চীনের কাছ থেকে তাদের অনুমতি নিতে হবে।

বিশ্বের কোনো দুর্লভ খনিজ পণ্যের উৎপাদনকারী যদি তাদের পণ্যে চীনের দুর্লভ খনিজ উপকরণ ব্যবহার করে, তবে সে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের এখন থেকে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হবে। আর চীনা উপকরণ ব্যবহার করে ‘দুর্লভ খনিজ চুম্বক’ প্রস্তুতকারীদেরও একই প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন

চীন নতুন নিয়ম কীভাবে কার্যকর করতে পারে

এটা এখনো নিশ্চিত নয়। চীনের আইন অনুযায়ী, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন ভাঙলে শাস্তি হিসেবে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে বিদেশি উৎপাদনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করাটা কাজটি কঠিন।

যেসব বিদেশি ‘দুর্লভ খনিজ’ প্রতিষ্ঠান চীনা উপকরণ বা যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীল, তারা নিয়ম লঙ্ঘন করলে চীনা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর এই ঝুঁকি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করবে। এতে চীনের ‘দুর্লভ খনিজ’ সরবরাহের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ইতিমধ্যে যে তৎপরতা চলছে, তা আরও ত্বরান্বিত হবে।

আরও পড়ুন