চীনে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটার কারণ কী

শীতে করোনার আরেকটি ঢেউ চীনে আসছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছেছবি: এএফপি

চীনা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি করোনার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে। এই পদক্ষেপের পর দেশটিতে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মজুত নিয়ে গুরুতর সংকট দেখা দেয়।

সংকটের খবরে চীনের লোকজন করোনা পরীক্ষার কিট, ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এসব পণ্য কিনতে তাঁরা অনলাইন-অফলাইনে ছোটাছুটি শুরু করেন।

কিন্তু কেন? বিবিসি মনিটরিংয়ের কেরি অ্যালেন তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন।

চীনে লেবু, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ টিনজাত পিচ ফলসহ ঘরোয়া প্রতিকারের বিভিন্ন পণ্যের অনেকাংশই এখন আর অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

পণ্য মজুত একটি বৈশ্বিক সমস্যা। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান শহরগুলোতে কঠোর লকডাউন জারির আগে মুদিদোকান ফাঁকা হয়ে যাওয়ার ছবি অনলাইনে দেখা গেছে। কিন্তু করোনার লকডাউন শিথিল করার পর এই ধরনের সমস্যার কথা চীনেই প্রথম শোনা গেল।

চীনা কর্তৃপক্ষ করোনার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। ফলে দেশটির লোকজন নিজ বাড়িতেই স্বেচ্ছায় সঙ্গনিরোধে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা বাড়িতে বসে নিজে নিজেই করোনা পরীক্ষা করার অনুমতি পেয়েছেন।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে, শীতে করোনার আরেকটি ঢেউ চীনে আসছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আশঙ্কা থেকেই দেশটির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনছেন।

করোনার সম্ভাব্য নতুন ঢেউ মোকাবিলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশটির স্থানীয় প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা স্থানীয় হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ইউনিটগুলোকে হালনাগাদ করতে বলছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ‘জ্বরসংক্রান্ত ক্লিনিক’ খুলতে বলছে।

আরও পড়ুন

করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে চাপের মুখে পড়তে পারে, তার লক্ষণ ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। অনলাইনে যেসব ভিডিও ঘুরছে, তাতে দেখা যায়, ক্লিনিকগুলো রোগীতে ভরে উঠেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে কীভাবে ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, ভিটামিন, সর্দি বা ফ্লুর ওষুধের চাহিদা চীনে বিপুলভাবে বেড়েছে, তা চায়না ডেইলির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কিছু সংবাদমাধ্যম খালি ফার্মেসির ছবি প্রকাশ করেছে।

কীভাবে চীনা ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মগুলো বিপুল চাহিদা পূরণে পূর্ণ শক্তি নিয়ে উৎপাদন কাজ করছে, তা চীনা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে।

চায়না ডেইলি বলছে, আতঙ্কে কেনাকাটা এতটাই বেড়ে গেছে যে চীনের গুয়াংজু শহরের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় লোকজনকে বিচারবুদ্ধি খাঁটিয়ে কেনাকাটা করতে আহ্বান জানিয়েছে।

গুয়াংজুর কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, পণ্যসামগ্রী বিপুল পরিমাণে কিনে মজুত করার কোনো দরকার নেই।

গুয়াংজুতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে করোনার সর্বাধিক সংক্রমণ লক্ষ করা গেছে।

চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, করোনা শনাক্তকরণ কিটের চাহিদা চীনে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। করোনার কঠোর বিধি শিথিলের পর এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলেছে, জেডি হেলথের মতো শীর্ষস্থানীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে করোনা শনাক্তের কিট দ্রুত স্টকের বাইরে চলে গেছে।

‘স্টক’ শেষ

দ্য পেপার নামের সংবাদ ওয়েবসাইটে বলা হয়, সম্প্রতি চীনে ভোক্তাদের মধ্যে ভিটামিন সি-এর চাহিদা বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে।

সংবাদ ওয়েবসাইটটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু শপিং প্ল্যাটফর্মে বিক্রির জন্য আর লেবু অবশিষ্ট নেই। একই সঙ্গে লেবুর স্বাদযুক্ত চা, মিষ্টি, পানির মজুতও শেষ।

চায়না ডেইলির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, টিনজাত পিচ ফলের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষণীয়। অনলাইন-অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই এই পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।

পত্রিকাটি বলছে, কিছু অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে বয়ামজাত পিচ ফলের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে সেগুলোকে প্রায়ই ‘স্টকের (মজুত) বাইরে’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সিনা নিউজ বলছে, অনলাইনে এমন গুজব ছড়িয়েছে যে এই ফল করোনার উপসর্গ উপশম করতে পারে।

তবে দেশটির চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলছেন। কোনো কোনো চিকিৎসক দেশটির শীর্ষ সম্প্রচারমাধ্যমে উপস্থিত হয়ে লোকজনকে ‘অতিরিক্ত’ ভিটামিন সি গ্রহণ না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।

এমনকি কোনো কোনো চিকিৎসক এই বলে সতর্ক করেছেন যে অত্যধিক পিচ ফল খেলে তা কাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।